সৃজনশীল মানুষ জীবনের সম্পূর্ণতার খোঁজ করে

তারেক আনন্দ
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সৃজনশীল মানুষ জীবনের সম্পূর্ণতার খোঁজ করে

কিংবদন্তি গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের আজ জন্মদিন। একাশি পেরিয়ে বিরাশি বছরে পা রাখলেন এই গুণী মানুষ। তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলার খড়কীতে হলেও ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন ঝিনাইদহের নানাবাড়িতে। রফিকউজ্জামান শুধু গীতিকবিই নন, শতাধিক চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন। পরিচালনা করেছেন ‘জন্মদাতা’ নামের একটি ছবিও। ষাটের দশকে কবি হিসেবেও ছিল তার সুনাম। বহু প্রতিভার অধিকারী রফিকউজ্জামানের স্কুল-কলেজ জীবনে ছবি আঁকার প্রতি ছিল অন্যরকম নেশা। বিশেষ এ দিনটি উপলক্ষে গতকাল কথা হয় এই গুণী মানুষের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ

জীবনের এ পর্যায়ে এসে কী মনে হয়? জীবনটাকে কীভাবে দেখছেন?

যারা সৃজনশীল মানুষ তারা জীবনের সম্পূর্ণতার খোঁজ করে। কিন্তু সমগ্রকে তো পাওয়া যায় না। আমরা পাই সব টুকরো টুকরো জিনিস। এই টুকরোগুলোকে জোড়া দিয়ে যখন ভাবি, সমগ্র হলো? দেখি না, হয় না। ওই সমগ্রকে যদি পেতাম! এটাই হচ্ছে অসম্ভব রকমের একটা বাসনা। এখনো যে লিখছি, ওই অনুসন্ধানটুকু আছে বলেই লিখতে পারছি। মাঝে মাঝে মনে হয় শরীর আর আমাকে বহন করতে পারছে না।

প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তির হিসেব কষেন?

সৃষ্টিশীলতার জায়গায় আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তবে বিরাট একটা অতৃপ্তি আছে, আর এই অতৃপ্তি হলো, এখন যারা গান লিখছেন তাদের নিয়ে। কোনোরকম লিখে ফেলি আর কি!

অতৃপ্তির বিষয়টা নিয়ে যদি বিস্তারিত বলতেন।

আমার জায়গা থেকে আজ অব্দি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি বলতে চাই, আমাদের যত গীতিকবি আছে, নতুন যারা আসছে। প্রথমে তারা গান লেখার নিয়মটা রপ্ত করুক। আগে ভালোভাবে জানুক। জেনে যদি মনে হয়, এখানে প্রতিবন্ধকতা আছে, সীমাবদ্ধতা আছে তা হলে সে তার মতোই লিখুক। আমাদের দেশে যারা নতুন আসছে তাদের মধ্যে অনেকের জানার আগ্রহটাই নেই। আমি যেভাবে কষ্ট করেছি, সে সময় বড়দের কাছে গেলে বলতেন, লেখো, লিখতে লিখতে হয়ে যাবে। এখন যারা আসছে, তাদের যেন এই কষ্ট না করতে হয়। আমার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই, আর কোনো প্রত্যাশাও নেই। অতৃপ্তি শুধু এই একটা জিনিসই। এটা নিয়েই আমার কষ্ট।

ফেসবুকে ‘বাংলা গান রচনাকৌশল ও শুদ্ধতা’ পেজটি পরিচালনা করছেন। নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। এখানে থেকে অনেকেই শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া বহু আগে ‘বাংলা গান : রচনাকৌশল ও শুদ্ধতা’ নামে বই প্রকাশ করেছিলেন। এই বই প্রকাশের আগ্রহটা এলো কীভাবে?

এটারও একটা ঘটনা আছে। আমি যখন বেতারে খাতা দেখা বোর্ডের প্রধান ছিলাম তখন চমৎকার সব লেখা আসত, এত সুন্দর লেখা। কিন্তু সেগুলো নিয়মের মধ্যে ছিল না। তারা না জানার কারণে নিতে পারতাম না। তখন বেতারে আমি প্রস্তাব করেছিলাম, যারা ভালো লিখছে তাদের মধ্যে থেকে আট দশজনকে বাছাই করে ওয়ার্কশপ কি করা যায়? আমাকে বলা হলো, আমাদের বাজেট নেই। কারণ তাদের ঢাকায় আনা। থাকা, খাওয়া, দুই দিন ওয়ার্কশপ করতে তো অনেক বাজেট দরকার। তাদের আর ওয়ার্কশপ করানো গেল না। সেই সময়ই আমি বই লেখা আরম্ভ করলাম। ‘বাংলা গান : রচনাকৌশল ও শুদ্ধতা’ বইটি প্রকাশ হলো। প্রকাশের পর আমাদের দেশ তো আছেই, পশ্চিমবঙ্গ থেকেও অনেকে বইটার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।

আজ বিশেষ দিন। বিরাশি বছরে পা রাখলেন। দিনটি কীভাবে কাটবে?

চ্যানেল আইয়ের তারকাকথনে থাকব। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে। আর বাসায় বন্ধু-বান্ধব কেউ কেউ আসবে। যারাই আসবে তাদের সঙ্গে সময় কাটাব।

‘রফিকউজ্জামান জন্মোৎসব ২০২৪’ আয়োজন করছে আনান ফাউন্ডেশন। এই উৎসব নিয়ে আপনার পরিকল্পনা?

আমার তো কোনো পরিকল্পনা নেই। ওরা করতে চাইল, আমি সম্মতি দিলাম। জন্মদিন উপলক্ষেই এ অনুষ্ঠানটি ছুটির দিনে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি গুলশানের আনান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে। আমাকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছে। এখানে অনেকেই লিখেছেন। দীর্ঘদিন পর দেশে এসেছেন রমলা সাহা, সত্য দার স্ত্রী। তিনিও লিখেছেন। গাজী মাহমুদুর রহমান, সুজেয় শ্যাম, শেখ সাদি খান, আবিদ আনোয়ার, শহীদ মাহমুদ জঙ্গি, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, মুন্সী ওয়াদুদ ওনারা লিখেছেন আমাকে নিয়ে। আমার প্রিয় মানুষদেরকে হয়তো ওরা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সবার সঙ্গে দেখা হলে ভালো লাগবে।

কালজয়ী ১০ গান

সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে

কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

দুঃখ আমার বাসর রাতে পালঙ্ক

কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, সুরকার সত্য সাহা

পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝর্না বলো

কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, সুরকার খন্দকার নুরুল আলম,

বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম

কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, সুরকার সত্য সাহা,

আজ বড় সুখে আমি কাঁদলাম

সুর : আলাউদ্দিন আলী, কণ্ঠ : মিতালী মুখার্জি

আমার মতো এত সুখী

কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলু, সুরকার আলাউদ্দিন আলী

পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি

কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও এন্ড্রু কিশোর, সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী

কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা, সুরকার সত্য সাহা

তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে

কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, সুরকার খন্দকার নুরুল আলম

কি জাদু করেছো বলো না

কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপা, সুরকার আলী আকরাম শুভ