ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পরাজয় অসম্ভব: পুতিন

অনলাইন ডেস্ক
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪১
শেয়ার :
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পরাজয় অসম্ভব: পুতিন

ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীর পরাজয় অসম্ভব বলে মনে করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।  গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তিনি এ কথা বলেন। 

সাক্ষাৎকারে পুতিন আরও বলেন, ‘ইউক্রেন আসলে একটি ‘কৃত্রিম রাষ্ট্র’ এবং সেখানে রুশ বাহিনীর জয় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো ‘বিভ্রান্তির মধ্যে’ থাকা উচিত নয়।

চলতি ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে। যুদ্ধের দুই বছর পূর্তিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ট্যাকার কার্লসনকে বৃহস্পতিবার একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে মধ্যযুগ থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কও তুলে ধরেছেন তিনি।

পুতিন আরও বলেন, ‘রুশ বাহিনীর অভিযানের শুরু থেকে পশ্চিমা বিশ্ব নিয়মিত গুজব ছড়িয়েছে যে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী কৌশলগত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কিন্তু এখন সম্ভবত পশ্চিমও অনুভব করতে পারছে যে, এতদিন তারা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল। আর আমার মতামত যদি জানতে চান, সেক্ষেত্রে আমি বলব, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীকে পরাজিত করা অসম্ভব।’

সাক্ষাৎকারে পুতিন আরও বলেন, ‘ইউক্রেন সেই প্রাচীন কাল থেকে রুশ ভূখণ্ডের অংশ ছিল। সতের শতক থেকে সেখানে পোল্যান্ডের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে এবং ইউক্রেনের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মস্কোর অধীনে আসতে চাইলেও সে সময় মস্কো সায় দেয়নি। তার প্রধান কারণ ছিল, তৎকালীন পোল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায়নি রাশিয়া। তবে এক সময় জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সাড়া দিয়ে ইউক্রেনকে নিজ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মস্কো। সে সময় মস্কোর সিংহাসনের ছিলেন জারিনা (সম্রাজ্ঞী) ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট। ১৭৬২ সাল থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত মস্কোর সিংহাসনে ছিলেন তিনি।’

পুতিন বলেন, ‘১৯১৭ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লব হলো। তার তিন বছর পর ১৯২০ সালে পোল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হলো এবং ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল দখল করে নিল পোল্যান্ড। আরও পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত সেনারা পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও হাঙ্গেরির দখলে থাকা ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলোর উদ্ধার করল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা স্টালিন ইউক্রেনকে ‘সোভিয়েত’ বা রাজ্যের মর্যাদা দেন। তাই আমি বলতে চাই রাষ্ট্র হওয়ার জন্য যে ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকা দরকার, তা ইউক্রেনের নেই। এটি স্টালিনের একটি প্রকল্প এবং আসলে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র।’

২০১৫ সালে মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে সাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবিরের অভিযোগে বেশ কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত দুই বছরে ইউক্রেনের চার প্রদেশ দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। এ সব প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো এবং একাধিকবার রাশিয়া জানিয়েছে যে কিয়েভের সঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরু করতে আগ্রহী মস্কো। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি ডিক্রি জারি করেন। সেই ডিক্রিতে ঘোষণা করা হয় যে, পুতিরে নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো প্রকার শান্তি আলোচনায় যাবেন না তিনি।

কীভাবে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হতে পারে, সাক্ষাৎকারে তা ও বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমি আপনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, যদি আপনারা সত্যিই যুদ্ধের অবসান চান, তাহলে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা প্রদান বন্ধ করুন।’