খাল দখলদারদের ধিক্কার জানালেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সরকারি খাল, খাস জমি এগুলো কতিপয় দখলদার অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমরা জানতে পেরেছি যারা খাল, খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। যারা সরকারি জমি, জনগণের জমি দখল করেছে- তাদের ধিক্কার জানাই।’
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সাতারকূল-ভাটারা ১০০ ফুট এলাকায় সূতিভোলা খালের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং খালের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, নদীরক্ষা কমিশনসহ পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধি ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেব। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব। অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান চলবে।’
শুরুতে আতিকুল ইসলাম সূতিভোলা খাল এবং পরবর্তীতে পাশের সমুদ্র খালের উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেন। এসময় মেয়রের উপস্থিতিতে খালের পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটের তৈরি দেয়াল ভেঙে দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা দখলমুক্ত করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলকার নায়ন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান ও মাহমুদুল হাসান।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘মূল খালের পাশে অনেক খাস জমি রয়েছে। সেসব খাস জমিতে শিশুদের জন্য খেলাধুলার জায়গা করে দেওয়া হবে, খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, নান্দনিক গণপরিসর, পার্ক, নৌকার জন্য ঘাট নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার খালের উন্নয়ন কাজ করা হবে। এর আওতায় সূতিভোলা খাল ও সমুদ্র খালের উন্নয়ন হবে। প্রায় ৭ কিলোমিটার খাল উন্নয়নের এই প্রকল্পে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হবে।’
সূতিভোলাকে একটি মডেল খাল হিসেবে উন্নয়ন করার ঘোষণা দিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার পূর্ব পাশে মোট প্রায় ২৯ কিলোমিটার খালের উন্নয়ন ও খালগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে। এ বছরের মধ্যে প্রথম ধাপে সূতিভোলা খালের ৭ কিলোমিটার উন্নয়ন করব এবং পরবর্তীতে বাকি ২২ কিলোমিটারের উন্নয়ন হবে। সূতিভোলা খালটিকে একটি মডেল হিসেবে উন্নয়ন করা হবে। সূতিভোলা খালের আদলে পর্যায়ক্রমে অন্য খালগুলোরও উন্নয়ন করা হবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পরিদর্শনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করছি আপনারা নিজ দায়িত্বে খালের এবং সরকারি জমির অবৈধ দখল ছেড়ে দিন। খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন এবং সবুজায়ন হলে এই এলাকাটি অনেক সুন্দর হবে। জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। তাই জনগণের জন্য এই এলাকাটি নান্দনিকভাবে সাজাতে খালের উন্নয়ন করা হবে।’
এ সময় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘জলাধারগুলো ঢাকা শহরের হার্টের (হৃৎপিন্ড) মতো। এই জলাধারের পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হার্টের ব্লক হওয়ার মতো। হার্টে ব্লক হলে যেমন হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়, তেমনে জলাধার ব্লক হলে শহর প্রাণ হারাবে, জলাবদ্ধতা হয়ে শহর ডুবে যাবে। তাই হাউজিং কোম্পানিগুলোকে এই জলাধার ভরাট করতে দেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘ঢাকার খালগুলো একসময় ওয়াসার অধীনে ছিল। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশন বুঝে পাওয়ার পর থেকে খালের উন্নয়নে কাজ করছে। বিভিন্ন খালে দেখা যাচ্ছে নেভিগেশন নিশ্চিত না করে পানির ওপরের স্তরে ওয়াসার পাইপ বসানো হয়েছে। যারা ডিজাইন করেছে কীভাবে এটি হলো? আমি অনুরোধ করব প্রতিটি খালের নেভিগেশন নিশ্চিত করে পাইপ বসানোর জন্য। সবাই সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে, একটি সুন্দর ঢাকা নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম ঢালী, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন, ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।