চাষি থেকে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী, কে এই চম্পাই সোরেন
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে গত বুধবার ইস্তফা দেন হেমন্ত সোরেন। তারপরই জমি কেলেঙ্কারি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের আর্থিকবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর ফলে বদলে যায় রাজ্যটির রাজনৈতিক পটভূমি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ শুক্রবার শপথ নিয়েছেন চম্পাই সোরেন।
চম্পাই সোরেন এক সময় চাষি ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার তুলে ধরেছে চাষি থেকে তার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণ ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা চম্পাই সোরেনকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আজ শুক্রবার বেলা ১২টায় রাজ্যটির রাজধানী রাঁচীতে অবস্থিত রাজভবনের দরবার হলে সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন চম্পাই সোরেন।
জেএমএমের পক্ষ থেকেই চম্পাইকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এ দলের কার্যকরী সভাপতি সদ্য পদত্যাগকারী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খন্ডের রাজনীতিতে ‘টাইগার’ নামে পরিচিত চম্পাই। হেমন্তের মন্ত্রিসভার পরিবহনমন্ত্রী ছিলেন তিনি। জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১০ দিন সময় পাবেন চম্পাই।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
ঝাড়খন্ডের সদ্য বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি
রাজনীতিতে চম্পাইয়ের উত্থান বেশ চমকপ্রদ। ঝাড়খন্ডের সেরাইকেলা-খরসওয়াঁ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম জিলিঙ্গোরাতে জন্ম তার। কৃষক পরিবারের সন্তান চম্পাই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে নিজেও কৃষিকাজ করতেন। তবে দশম শ্রেণি পাস করেই জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রাজনীতিতে।
অবিভক্ত বিহার ভেঙে পৃথক আদিবাসীভূমি ঝাড়খন্ড গড়ার আন্দোলনে যোগ দেন চম্পাই। সেই সময় থেকেই সিংভূমে ‘টাইগার’ নামে পরিচিতি পান তিনি। গোটা সিংভূম অঞ্চলের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা চম্পাই।
১৯৯১ সালে সেরাইকেলা আসনে উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন চম্পাই। এরপর ১৯৯৫ সালে জেএমএমের টিকিটে একই আসন থেকে বিধায়ক হন। ২০০০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেরাইকেলা থেকে লড়লেও বিজেপির অনন্তরাম টুডুর কাছে হেরে যান তিনি। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে ওই আসনে টানা চারবার জিতে বিধায়ক হন চম্পাই।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে জামশেদপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান চম্পাই। তারপর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন, এখানেই শেষ হয়ে গেল চম্পাইয়ের রাজনীতি। অনেকেই মনে করেছিলেন, রাজনীতির ময়দানে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না তিনি। এমনকি নিজ দলের অন্দরেও তার কোণঠাসা হওয়ার জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন চম্পাই।
আজ ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চম্পাই সোরেন
জেএমএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইডি গ্রেপ্তার করলে স্ত্রী কল্পনাকে মুখ্যমন্ত্রী করার পরিকল্পনা করেছিলেন হেমন্ত সোরেন। কিন্তু দলের অন্তত চারজন বিধায়ক তাতে সরাসরি আপত্তি জানান। সেই ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠী’র নেতৃত্বে ছিলেন হেমন্তের ভাইয়ের স্ত্রী, জেএমএম বিধায়ক সীতা সোরেন এবং আরেক প্রভাবশালী নেতা চামরা লিন্ডা। শেষ পর্যন্ত সেই চাপের কাছে পিছু হটেই ‘নিরপেক্ষ’ চম্পাইয়ের হাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেন হেমন্ত।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
রাজ্যপাল আমন্ত্রণ জানানোর পর তাই আজ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন চম্পাই। কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আলমগীর আলম এবং আরজেডির সত্যানন্দ ভোক্তাও মন্ত্রী হিসাবে আজ শপথ নিয়েছেন।