ডিসি-ইউএনওসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চাকরিপ্রত্যাশীর মামলা
রংপুরের পীরগাছায় গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি)-সহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মোশারফ হোসেন নামের এক চাকরিপ্রত্যাশী।
গত ১০ জানুয়ারি আদালতে মামলাটি করেন ওই চাকরিপ্রত্যাশী। আজ বুধবার দুপুরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়।
মামলার আসামিরা হলেন পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান, গ্রাম পুলিশ নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সব সদস্য এবং সরকারের পক্ষে রংপুরের ডিসি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৩ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ৫ ও ১৫ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ইউএনও নাজমুল হক সুমন। বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা সনদের সত্যায়িত অনুলিপি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বলা হয়। তবে আগে যারা আবেদন করেছিলেন, তাদের নতুন করে আবেদনের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়।
গত ২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ হলরুমে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মামলার বাদী ও উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘগোয়া গ্রামের প্রায়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেনসহ ৬৫ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। সেদিনই বাছাই শেষে ১৩ জনকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। নারী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
মামলার বাদী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গ্রাম পুলিশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আমাকে না নিয়ে সাধারণ কোটায় একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে অজ্ঞাত কারণে তড়িঘড়ি করে রাতেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য হয়েছে বলে সর্বত্র আলোচনা চলছে। গ্রাম পুলিশ সংক্রান্ত বিধিমালায় চাকরিতে প্রবেশে কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার মেধাক্রম, শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিবরণীসহ সরকার কর্তৃক জারি করা কোটা পদ্ধতি সম্পর্কিত নির্দেশাবলি, যতদূর সম্ভব অনুসরণপূর্বক বাছাই কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি তালিকা সুপারিশ করবে। কিন্তু এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।’
রংপুর জেলা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মহসীন আলী বলেন, ‘গ্রাম পুলিশ নিয়োগে মোশারফ ব্যতীত অন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাকরি প্রার্থী ছিল না। সর্বক্ষেত্রে নিয়োগে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। তার আইনগত অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে অন্যায় করা হয়েছে।’
গ্রাম পুলিশ নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও নাজমুল হক সুমন ছুটিতে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইউএনওর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু তার মামলা করার অধিকার রয়েছে, তিনি মামলা করেছেন। আমরা আমাদের জবাব আদালতে যথা সময়ে দেব।’