‘এটা সরকার করল নাকি শ্রমিক, আমাকে জবাবটা দেন’

অনলাইন ডেস্ক
২৮ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:২৩
শেয়ার :
‘এটা সরকার করল নাকি শ্রমিক, আমাকে জবাবটা দেন’

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শ্রমিকরা নয়, সরকার মামলা করেছে বলে দাবি করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রবিবার কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে খালাস ও জামিন চাইতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন ড. ‍মুহাম্মদ ইউনূস। শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায়ে ৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে খালাস চেয়ে আপিল করেন তিনি।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু এই মামলা সরকার করল না কি শ্রমিক করল আপনারা তো কিছুই বললেন না। কলকারখানা অধিদপ্তর সরকারের। এ মামলা তারাই করেছে। শ্রমিকরা এ মামলা করেনি।’

এ মামলার শিকার কীভাবে হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা একটা স্বপ্নের পেছনে ছুটেছি। এই স্বপ্ন বুনতে গিয়ে কারো বিরাগভাজন হয়েছি। কিন্তু কেন এই মামলা করল সেটা বলতে পারব না। আমার প্রত্যাশা হচ্ছে আমরা নতুন পৃথিবী গড়ব। তিন শূন্যের পৃথিবী গড়ব। এ মামলার সাজা একটি ছোটখাটো ব্যাপার, এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই৷

তিন শূন্যের পৃথিবীর বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা তিন শূন্যের পৃথিবী গড়তে চাই। যেখানে নেট কার্বন এমিশন জিরো, জিরো পভার্টি এবং জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট আরেকটা হলো ওয়েলথ কনসেনট্রেশন। সমস্ত সম্পদ মালিক ওপরের দিকে হচ্ছে। নিচের দিকের মানুষ বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। সম্পদ একদিকে ছোটে, সেটা হলো বড়লোকের পেছনে। সমস্ত প্রতিষ্ঠান, আইন, সমস্ত নীতি-নির্ধারণ, সব স্ট্রাকচার সবকিছু তার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। কাজেই আমরা সেই তিন শূন্যের পৃথিবী গড়তে চাই। সেটা আমাদের কমিটমেন্ট। কাজেই আমরা চাই এটার পেছনে আমরা যারা আছি সেটা যাতে করতে পারি। আমাদের বয়সও তো বেশি নাই। আর অল্প কয়দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা যা করতে পারি।’

এদিকে, শ্রম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আজ আপিল করেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন।আদালত শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করলে আসামিদের জামিন আবেদন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। শুনানির পর আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আজ সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর কাকরাইলস্থ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর তিনি আপিল দায়ের করেন।

গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের ছয় মাস করে কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। কারাদণ্ডের সঙ্গে আসামিদের ৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও করেন আদালত। যা অনাদায়ে আদালত আসামিদের আরও ১০ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

রায়ে শ্রম আইনের ৩০৩ এর ৩ ধারায় প্রত্যেক আসামির ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেন এবং এ অর্থদণ্ড না দিলে আসামিদের আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া রায়ে অপর ধারায় শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ ও ৩০ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন আদালত।