স্বজনদের পাহারায় স্কুলে যান শিক্ষিকা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
২৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১৭:৩৮
শেয়ার :
স্বজনদের পাহারায় স্কুলে যান শিক্ষিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে লিজা আফরোজ নামের এক শিক্ষিকা স্কুলে যান তার স্বজনদের পাহারায়। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের দেওয়া হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে স্বজনদের সাহায্য নিচ্ছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার দুপুরেও কয়েকজন যুবক লাঠি, দা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই শিক্ষিকার বাড়িতে যান ও স্কুলে যেতে বাড়ির বাহিরে গেলে পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার।

ভুক্তভোগী লিজা শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের মো. রোমান প্রধানের স্ত্রী। তিনি ভাংনাহাটি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় ৫ জনকে আসামি করে অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।

অভিযুক্তরা হলেন- গ্রামের মোস্তফা কামাল (৬০), মোফাজ্জল হোসেন (৪৫), শাকিল (৩৫), শাহীন (৩০) ও রুহুল আমিন (৬৫)।

শিক্ষিকা লিজা আফরোজ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবত ভাংনাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। আমার স্বামীর সঙ্গে তার চাচাতো ভাই মোস্তফা কামালের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। মোস্তফা গত তিন মাস ধরে আমাকে বিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। গত ১৪ জানুয়ারি মোস্তফা আমার স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে বলেন, ‘‘দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাকে যেন অন্যত্র বদলি করা হয়”। প্রধান শিক্ষক আমার অপরাধ জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “অপরাধ বুঝি না, তাকে চলে যেতে হবে। যদি ভালোভাবে না যায়, তাহলে তার পরিণাম ভয়াভহ হবে”। আমি বিষয়টি আমার অভিবাকদের জানাই। অভিযুক্তরা রাস্তার পাশে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের হুমকির মুখে স্বজনদের পাহারায় স্কুলে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে দা, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে এসে অভিযুক্তরা হুমকি দিয়ে গেছে। রবিবার থেকে স্কুলে যেতে দেবে না। বাড়ির বাহিরে গেলে আমার পা ভেঙে দেবে তারা। আমি পরিবার নিয়ে হুমকির মুখে আছি।’

ভাংনাহাটি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা বেগম বলেন, ‘কদিন আগে মোস্তফা কামাল স্কুলে এসে লিজা আফরোজকে এই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়ে বলে গেছেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্কুল শিক্ষিকাকে হুমকির বিষয়টি সঠিক নয়। আমি কোনো শিক্ষিকাকে হুমকি দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’

শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, ‘ওই শিক্ষিকাকে হুমকির বিষয়টি আমাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল কয়েকবার আমার অফিসে এসে লিজা আফরোজের বিরোদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। আমি তদন্ত করে সত্যতা পাইনি।’

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। একটি ভিডিও পেয়েছি। তাতে দেখা গেছে কয়েকজন ছেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লিজা আফরোজের বাসার সামনে গিয়েছে। ভিডিও যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।