অনবদ্য সৃষ্টিতে নায়করাজ বেঁচে আছেন
দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পের ভিত তৈরি হয়েছে যাদের অবদানে, রাজ্জাক তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তাকে দিয়েছে 'নায়করাজ' উপাধি। চার দশকে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আজ তার জন্মদিন। ১৯৪২ সালের এই দিনে অবিভক্ত ভারতের কলকাতার কালীগঞ্জের নাকতলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে আজ তার ৮২ বছর পূর্ণ হতো। জন্মদিনে নায়করাজ স্মরণে কথা বলেছেন তার তিন সহশিল্পী...
আলমগীর
নায়করাজ রাজ্জাক ছিলেন পরিশ্রমী মানুষ। নিজের অভিনয়সত্তা দিয়ে তিনি সফল নায়কে নিজেকে পরিণত করতে পেরেছিলেন। এজন্য সবাই তাকে নায়করাজ উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হন। রাজ্জাক ভাই মনে-প্রাণে একজন শিল্পী ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের কিংবদন্তি- এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। নায়ক হিসেবে আমাদের চলচ্চিত্রকে দর্শকের কাছে তিনিই জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি বিশাল একটি স্থান দখল করে আছেন। রাজ্জাক ভাইয়ের প্রতিভা, পরিশ্রম ও ভাগ্য চলচ্চিত্রে এতটাই সহায় ছিল যে, তাকে কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমাদের প্রিয় রাজ্জাক ভাইয়ের আজ জন্মদিন। এদিনটি আমার কাছে একটু আলাদাভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ রাজ্জাক ভাইয়ের এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাই। তাই দিনটি আমার কাছে সব সময়ই স্মরণীয়। রাজ্জাক ভাইকে আমি আপন ভাই-ই মনে করি।
ববিতা
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
রাজ্জাক ভাই তো একটা ইনস্টিটিউশন। তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসা। ওনার কাছ থেকেই আমি সব শিখেছি। রাজ্জাক ভাই চলচ্চিত্রে আসেন জহির রায়হানের হাত ধরে। আমিও চলচ্চিত্রে আসি জহির ভাইয়ের সিনেমার মাধ্যমেই। প্রথম চলচ্চিত্র ‘সংসার’-এ রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার বাবা। আর সুচন্দা আপু ছিলেন আমার মা চরিত্রে। এর পরের চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় আমি ছিলাম রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা। তাই রাজ্জাক ভাই ছিলেন আমার অভিভাবক। তিনি ছিলেন সব সময় ছায়া হিসেবে। আমার দীর্ঘ অভিনয়জীবনের একটা পিলারের নাম নায়করাজ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রাজ্জাক যেমন একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, আমার জীবনেও রাজ্জাক ভাই তেমন। ছিলেন সবচেয়ে প্রিয় অভিভাবক। আমার কাজ নিয়ে সব সময় দিকনির্দেশনা দিতেন তিনি। রাজ্জাক ভাইয়ের নিজ প্রডাকশন হাউস রাজলক্ষ্মীর বেশিরভাগ ছবির নায়িকা আমি।
নূতন
নায়করাজ রাজ্জাক। আমি তাকে ভাই বলেই ডাকতাম। তাকে নিয়ে বলা কিংবা স্মৃতিচারণ করা আমার জন্য অনেক কঠিন। কারণ তিনি আমার কাছে অভিভাবক। রাজ্জাক ভাই না থাকলে চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজের পরিপূর্ণতা পেতাম না। নিজেকে মূল্যায়িত করা আমার জন্য অসম্ভব ছিল। মাঝে মাঝে একটু স্বার্থপরতা নিয়ে বলি, রাজ্জাক ভাই শুধু আমার। যদিও তিনি সবার, সমগ্র দেশের এবং বাংলা চলচ্চিত্রের। আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘নতুন প্রভাত’-এর (১৯৬৯) সময় রাজ্জাক ভাই আমার ইনটারভিউ নিয়েছিলেন। স্বপ্নের নায়ককে সামনাসামনি দেখতে পাব ভেবে যতটা না উত্তেজিত ছিলাম, দেখার পরে তা নিমিষেই বিলীন; তার ব্যবহার দ্বারা। ওনার ব্যবহারে মনে হয়েছিল, আমি তার কত চেনা। সেদিন থেকে তার মৃত্যু অবধি রাজ্জাক ভাইয়ের ছায়াতলেই ছিলাম, আছি, থাকব। নায়করাজ বেঁচে থাকবেন অনবদ্য সৃষ্টিতে।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
চ্যানেল আইয়ের আয়োজন
নায়করাজের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে ‘গান দিয়ে শুরু’। অংশ নেবেন খুরশীদ আলম এবং ক্লোজআপ তারকা রাশেদ। চিত্রনায়িকা মৌসুমীর উপস্থাপনায় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে রয়েছে অনুষ্ঠান ‘নায়করাজের চার যুগ’। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে দেখানো হবে আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান ‘নায়ক থেকে নায়করাজ’। বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে রাজ্জাক পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সিনেমা ‘আয়না কাহিনী’। শাইখ সিরাজ নির্মিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রামাণ্যচিত্র ‘রাজাধিরাজ’ দেখানো হবে বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে।