দুর্বল প্রচারে মুখ থুবড়ে পড়ছে চলচ্চিত্র

ফয়সাল আহমেদ
২১ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
দুর্বল প্রচারে মুখ থুবড়ে পড়ছে চলচ্চিত্র

প্রচারেই প্রসার। ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাক্য এটি। প্রচার নেই তো প্রসার নেই। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রসার না হাওয়ার পেছনেও দুর্বল প্রচারই অনেকাংশে দায়ী। চলতি বছরের ছবিগুলোর কথাই ধরা যাক- এ সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে তিনটি সিনেমা। কিন্তু সাধারণ দর্শকের অনেকেই বিষয়টি জানেনই না! কারণ সিনেমা তিনটি নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর মতো কোনো প্রচারই ছিল না। সিনেমা তিনটির মধ্যে দুটি বাংলাদেশেরÑ ‘শেষ বাজি’ ও ‘কাগজের বউ’। আর অন্যটি কলকাতার সিনেমা ‘হুব্বা’। ‘হুব্বা’ কলকাতার সিনেমা হলেও ব্রাত্য বসুর সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা মোশাররফ করিম।

‘শেষ বাজি’ দিয়ে দীর্ঘদিন পর পর্দায় আসছেন সাইমন সাদিক। তার সঙ্গে রয়েছেন শিরিন শিলা। এটি পরিচালনা করেছেন মেহেদী হাসান। ইতোমধ্যে সিনেমাটির লুক নিয়ে ভক্তদের প্রশংসা পাচ্ছেন সাইমন। সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদীও ছিলেন এ নায়ক। মুক্তির আগে সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে বসেছিলেন প্রচারের পরিকল্পনা নিয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সিনেমার খুব বেশি পোস্টার চোখে পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে হতাশ এ নায়ক। আবার হঠাৎ করেই ‘কাগজের বউ’ সিনেমার চূড়ান্ত মুক্তির সিদ্ধান্ত আসে। সিনেমার শিল্পী পরীমণি মুক্তির আগে প্রচারে সরব হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে অসুস্থ হওয়ায় তিনি প্রচার থেকে দূরে। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গেছেন ভারতে। এদিকে সিনেমার পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া প্রচারে দেখা যায়নি।

যদিও প্রচারের কারণে একটি ছবি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা পেলে শিল্পী ও প্রযোজক উভয়ই লাভবান হন। সে ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে নিজের ছবির প্রচার কি শিল্পীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে? জানতে চাইলে সাইমন বলেন, ‘আমি কিন্তু শুধু আমার ছবির প্রচার করি না। যার ছবিই মুক্তি পাক না কেন আমি চেষ্টা করি সেই ছবির প্রচারও করতে। কিন্তু প্রযোজক সিনেমার প্রচারের জন্য আলাদা শিডিউল প্রস্তুত করবেন, শিল্পীরা সেই অনুযায়ী প্রচারাভিযানে অংশ নেবেন। কিন্তু ছবি মুক্তির আগে প্রযোজকদের সঠিকভাবে প্রচারের বিষয়ে পরিকল্পনাই থাকে না।’ এই নায়ক জানান, ২০টি হলে তার অভিনীত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ‘প্রচারেই প্রসার’ এই প্রবাদ ঢাকার চলচ্চিত্রের মূলধারার সিনেমায় দেখা যায় না। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ঢালিউড আজ যে সংকটে পড়েছে, তার অন্যতম কারণগুলোর একটি হলো ছবি মুক্তির আগে এর প্রচারের অভাব। ছবির প্রচারাভিযানে তারকাশিল্পীদের অনুপস্থিতিকে অনেক প্রযোজক বলছেন পেশাদারত্বের অভাব।

চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘আমার অভিনেত্রী ভারতে। ইমন ও অন্যরা শুটিংয়ে ব্যস্ত। আগে থেকে পরিকল্পনা না করার কারণে প্রচারে পিছিয়ে রয়েছি। তবে শুধু আমরাই না, কোনো সিনেমারই তো প্রচার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ ছাড়া একসঙ্গে দুটো সিনেমা মুক্তি পেতে পারে। এটা নিয়মেও আছে। সেখানে কীভাবে তিনটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে? একটি সিনেমার জন্য আমরা হল পাচ্ছি না। কোন নিয়মে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে, সেটা আমার জানা নেই।’ কাগজের বউ সিনেমাটি আটটি হলে মুক্তি পেয়েছে।

কলকাতার সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশে কোনো সিনেমা মুক্তির ঘটনা নেই বললেই চলে। সেখানে ‘হুব্বা’ একযোগে দুই দেশে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটির প্রধান আকর্ষণ মোশাররফ করিম। এই অভিনেতাকে দেখা গেছে হুব্বা চরিত্রে। ইতোমধ্যে সিনেমাটির প্রযোজনা কর্তৃপক্ষ কলকাতায় প্রচারে সাড়া ফেললেও বাংলাদেশে সেই তুলনায় কম প্রচার করেও দেশের দুই সিনেমার চেয়ে হল সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে। জানা যায়, সিনেমাটি দেশের ৬২টি হলে গতকাল মুক্তি পেয়েছে।

আবার চলচ্চিত্রের অনেকেই বলছেন, নায়ক-নায়িকারা যখন নিজে ছবির প্রযোজক হন, তখন তারা রাত-দিন এক করে সিনেমার প্রচারে লেগে থাকেন। নিজের লগ্নি করা ছবি নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ান। কিন্তু ওই নায়ক-নায়িকাই অন্য প্রযোজকের ছবির কাজ শেষ করে এর প্রচারে অংশ নেন না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ঢালিউডে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। আয়নাবাজি, স্বপ্নজাল, ঢাকা অ্যাটাকের মতো ছবিগুলো মুক্তির সময় নায়ক-নায়িকাদের দেখা যায় অভিনব কৌশলে প্রচারাভিযানে অংশ নিতে।