সংসদ মডেলে উপজেলা নির্বাচনের চিন্তা

বিএনপি আসবে না ধরেই প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের

মুহম্মদ আকবর
২০ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সংসদ মডেলে উপজেলা নির্বাচনের চিন্তা

বিএনপি আসবে না ধরে নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিতে পারে দলটি। তবে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে; সিদ্ধান্ত হবে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের পরের বৈঠকে।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দ্বন্দ্ব ব্যাপক আকার ধারণ করে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিলে এই দ্বন্দ্ব আরও ব্যাপক হতে পারে। আবার বিএনপির ভোটে আসার সম্ভাবনাও নেই। ফলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলের প্রতীক ছাড়াই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আওয়ামী লীগের অনেকেই আবার মনে করেন, উপজেলা নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের ‘মডেলে’ হতে পারে। অর্থাৎ দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দল অনুমোদিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নানা রকমের আলোচনা চলছে। তবে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে, সিদ্ধান্তের পর্যায়ে যায়নি। কিছুদিনের মধ্যেই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

২০১৫ সালের নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনসংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন হয়। এতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। এর মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখে আওয়ামী লীগ। বাকি উপজেলাগুলোতে ছিল দলের প্রার্থী। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়া অনেক উপজেলায় ঘটে হতাহতের ঘটনা।

গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় পাঁচ ধাপে। শপথও হয় পাঁচ ধাপে। ফলে উপজেলাগুলোর মেয়াদও কয়েক ধাপে শেষ হবে। আর সে অনুযায়ী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় গণনা হবে। জানা গেছে, এবারও ধাপে ধাপে ভোট হবে। সে অনুযায়ী চলতি মাসেই প্রথম ধাপে শখানেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ভোট হতে পারে রোজার আগেই, আগামী মার্চে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি যৌথসভা করে আওয়ামী লীগ। সভাসূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে তফসিলের আগে বা পরে গণভবনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ডেকে এনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা চূড়ান্ত বার্তা দেবেন। পরে ধাপে ধাপে ৮ বিভাগে সাংগঠনিক সফরে যাবেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। উপজেলা নির্বাচনের আগেই জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দূর করার চেষ্টা করা হবে। যৌথ সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রস্তাব করেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। সভায় উপস্থিত অনেকেই তার প্রস্তাবে সমর্থন জানান।

এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের সময়কে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে আছে; চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু গত নির্বাচনে কয়েকটি উপজেলায় উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল, তাই এবার সারাদেশে করলে আইনি বা দলগত সমস্যা থাকার কথা নয়।’

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি দল অনুমোদিত স্বতন্ত্র রাখা যেতে পারে। যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই মডেল সফল হয়েছে, তাই উপজেলাতেও এই রীতি অনুসরণ করা যেতে পারে।’

এই নেতার ভাষ্য, ‘প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করা হয়। তাই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী রাখার পাশাপাশি দল অনুমোদিত প্রার্থী রাখলে দুই কূলই রক্ষা হয়।’