জানা-অজানা সুচিত্রা সেন মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
তার আসল নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিনি বাংলার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা সিনেমায় উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি সুচিত্রা সেন। তার মন ভরানো অভিনয়শৈলী ও প্রতিভা বাংলা ছবির অভিনেত্রীদের বেলায় পাঠ্যপুস্তকে উদাহরণ হিসেবে থাকার মতো। কিংবদন্তি সুচিত্রা সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ভারত সরকার ১৯৭২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে। ২০১২ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।
ছোটবেলা : ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনি ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিবাহ হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন। তিনিও একজন অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্র জীবন : ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পায়নি। এরপর উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এবং সেই থেকে উত্তম সুচিত্রার যাত্রাপথ শুরু হয়। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই জুটি আজও সর্বসেরা এবং এ রকম জনপ্রিয় জুটির কাছাকাছিও কেউ পৌঁছতে পারেনি। ২০ বছরের ওপর এ জুটি বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
অন্তরীণ জীবন : ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লি যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারণে তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
মৃত্যু : ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। তিন সপ্তাহ আগে ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
জানা-অজানা
ঁআন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয়ী প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্য এই স্বীকৃতি পান তিনি।
ঁবলিউডে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ অবলম্বনে বেশ কয়েকটি কাজ হয়েছে। এগুলোতে পার্বতী বা পারু চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনেকে। তবে হিন্দি ছবিতে প্রথম এ চরিত্রে দেখা গেছে সুচিত্রা সেনকে।
ঁবলিউডে ‘দেবদাস’ই ছিল সুচিত্রা সেনের প্রথম ছবি। এ ছবিতে পার্বতী চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা সেন।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
ঁসুচিত্রা সেনের ‘আন্ধি’ গুজরাটে মুক্তির পর ২০ সপ্তাহ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া থাকার কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গুজরাটের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয় ছবিটি।
ঁসময় ফাঁকা না থাকার কারণে সত্যজিৎ রায়ের ‘চৌধুরানী’ ছবিতে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। এ কারণে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ ছবিটি আর বানাননি।
ঁ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে যৌনকর্মী পান্নাবাই ও তার কন্যা আইনজীবী সুপর্ণার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন।
ঁসুচিত্রা সেনই একমাত্র ভারতীয় অভিনয়শিল্পী যিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরস্কারটি পাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে যেতে হতো তাকে। কিন্তু তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা