তীব্র শীতে শিশুরা ভুগছে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ায়

আজাদুল আদনান
১৬ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
তীব্র শীতে শিশুরা ভুগছে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ায়

আবদুল্লাহর বয়স মাত্র ৫৫ দিন। আট দিন ধরে ভুগছে রোটা ডায়রিয়ায়। তার হাতে ক্যানুলা, চলছে স্যালাইন। অকুস্থল রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল। শিশুটির পাশে বসা ওর নানি কোহিনুর বেগম। তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকে বুকের দুধ পায় না আবদুল্লাহ। তাই বাজার থেকে আনা ফর্মুলা দুধ খাওয়াই। সেটা থেকেই সম্ভবত পেটে সমস্যা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পাতলা পায়খানা শুরু হলে বাসার পাশের আশুলিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে নিই। দুদিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এই হাসপাতালে পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। এখন ওর অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো।’ গতকাল সোমবার সকালে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বসে এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান কোহিনুর বেগম। ৮শ শয্যার এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। জরুরি ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১২শ থেকে ১৫শ রোগী চিকিৎসা নেয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশেরই ঠাণ্ডাজনিত রোগ। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার রোগীও আছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকেও প্রচুর রোগী আসায় প্রায়ই শয্যা সংকট থাকে। তাই যেসব রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন, তাদেরই শুধু ভর্তি করা হচ্ছে।

এ হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ভোগা জটিল রোগী সাতজনকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি রোগী ছিল ২২ জন।

হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকার পাশের জেলাগুলো থেকে আসা। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার রোগী সর্বাধিক। ডিসেম্বর থেকে চাপ অনেক বেড়েছে। শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে, রোগীর চাপ সামলাতে তত বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান (কামরুল) আমাদের সময়কে বলেন, ‘শীতে ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের প্রদাহ, অ্যাজমাসহ ঠাণ্ডাজনিত সব রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। বর্তমানে সারাদেশে তাপমাত্রা অনেক কম। এ হাসপাতালে আসা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসছে রোটা ডায়রিয়া নিয়ে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে টারশিয়ারি পর্যায়ে। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে অনেক রোগী আসায় যাদের অবস্থা জটিল তাদের

চিকিৎসা দিতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশই অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী। এটি হলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই, ছয় মাসের শিশুদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ এবং এর বেশি বয়সীদের পাতলা পায়খানা হলেই স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে দিনে তিনবারের বেশি পায়খানা হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।’

ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত মাস থেকে রোগীদের চাপ অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত নার্সরা। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শ^াসতন্ত্রের রোগী আসছে সবচেয়ে বেশি। শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় এক শয্যায় দুজন রোগীকেও রাখতে দেখা গেছে।

শুধু ঢাকা নয়। গ্রামাঞ্চলেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় এ ডায়রিয়ার রোগী বেশি তার মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম। বিশেষ করে মতলবে। সেখানে উপজেলা হাসপাতাল থাকলেও ভরসা আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র) হাসপাতাল।

গত দেড় মাসে ১৩ হাজার শিশু ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে এ হাসপাতালে। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বারান্দায় তাঁবু টানিয়ে আলাদা চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিউল আজম আমাদের সময়কে বলেন, ‘শীত ও গ্রীষ্মের শুরুতে রোটা ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং টিকা না নেওয়া শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে সবচেয়ে বেশি। এ জন্য মায়ের বুকের দুধে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষায় সবার আগে দরকার অভিভাবকদের সচেতনতা।’