আবাসিক হোটেল থেকে অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আটক
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। খবর পেয়ে অনুষ্ঠানটি পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ।
ওই অনুষ্ঠান থেকে বরসহ কমপক্ষে ৬৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিক এবং ১৯ জন বিদেশি নাগরিককে পাসপোর্টসহ আটক করা হয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১২ জন অস্ট্রেলিয়া এবং ৭ জন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী।
গতকাল রবিবার কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল ‘সি পার্ল-২’-তে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
আটকদের মধ্যে বর আব্দুল হামিদ (৩২) ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৪) মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাদের আত্মীয়-স্বজন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকেন। দুই কনে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা। আটকরা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আব্দুল হামিদ ও মোহাম্মদ ইলিয়াছের সঙ্গে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে হোটেল সি পার্ল-এ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের শতাধিক রোহিঙ্গা এবং অনেক বিদেশি নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের অভিযানের সময় অনেকে পালিয়ে গেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১২ জন মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং সাত জন যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রবিবার বিকেলে শহরের হোটেল সি পার্ল-এ দুই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকের সঙ্গে দুই রোহিঙ্গা তরুণীর বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকসহ ৮২ জনকে আটক করা হয়। এ সময় ১৯ বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি দেখে হোটেলের ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যান। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বিদেশি ১৯ জন নাগরিক গত এক মাস ধরে সি পার্ল হোটেলে অবস্থান করছেন। রবিবার দুই রোহিঙ্গা তরুণীর সঙ্গে দুই বিদেশি নাগরিকের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এখানে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি গরু ও মহিষ জবাই করা হয়েছে। খবর পয়ে অভিযান চালিয়ে অনুষ্ঠানে আসা রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিকদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার পরপরই হোটেলের ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যান।’
উখিয়া উপজেলার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হামিদা বেগম বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা বর আব্দুল হামিদ আমার আত্মীয়। দাওয়াত খেতে ক্যাম্প থেকে বাসে চড়ে কক্সবাজার শহরে আসি। দাওয়াত খেয়ে ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই হোটেলে এসে আটক করেছে পুলিশ।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ সেক্ষেত্রে তাদের শহরের হোটেলে জড়ো করার আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। হোটেল মালিক কিংবা ম্যানেজার অনুমতি ছাড়াই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। আবার হোটেলে বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। পলাতক থাকায় হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এখনও জানতে পারিনি আমরা। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’