দুই কারণে পশ্চিমাঞ্চল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

রাজশাহী ব্যুরো
১৪ জানুয়ারী ২০২৪, ২০:০৩
শেয়ার :
দুই কারণে পশ্চিমাঞ্চল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

বৈরি আবহাওয়ার কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, একদিকে চলন্ত ট্রেনে নাশকতার শঙ্কা, অন্যদিকে ঘন কুয়াশায় পশ্চিমাঞ্চলের সব ট্রেন কমপক্ষে ৪-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলাচল করছে। মূলত ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতির চেয়ে কম গতিতে চলাচল করায় গন্তব্যে পৌঁছাতে ও ছাড়তে দেরি হচ্ছে। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগের আওতাধীন সব ট্রেনই বিলম্বে চলাচল করছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি। এতে দৃশ্যমানতা কমেছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক চলন্ত ট্রেনে নাশকতা ও আগুন দেওয়ার ঘটনার জের রয়েছে। নাশকতার ঘটনাগুলোর পর কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ট্রেন বাতিলও করেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনগুলোর গতি কমানো হয়। সেই গতিতেই এখনো ট্রেনগুলো চলাচল করছে। এর ফলে কোনো ট্রেনই শিডিউল ধরে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কিংবা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।

আরও জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের আওতাধীন রাজশাহী, রংপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, খুলনা ও বেনাপোল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী আন্তনগর বনলতা, সিল্কসিটি, ধুমকেতু, পদ্মা, ঢালারচর, টুঙ্গিপাড়া, মধুমতি, তিতুমীর, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, নীলসাগর, একতা, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, চিত্রা, কপোতাক্ষ, সাগরদাঁড়ি, বরেন্দ্র, রূপসা, সীমান্ত, চিলাহাটি, লালমনিসহ আরও কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পাকশী বিভাগের আওতাধীন আন্তনগর বনলতা, সিল্কসিটি, পদ্মা, ধুমকেতু, ঢালারচর, তিতুমীর ও ঢাকা মেইল অন্তত ৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। আন্তনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ও চিলাহাটি থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনার উদ্দেশে এবং আন্তনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা থেকে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে ও চিলাহাটি থেকে রাত পৌনে ৭টায় ছাড়ার কথা। কিন্তু এসব ট্রেনও ৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। 

দিনের ট্রেনগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ ও রাতের ট্রেনগুলো গতিসীমা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে চলাচল করছে। শিডিউল বিপর্যয়ের এটি একটি বড় কারণ বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা।

খুলনা থেকে রাত ৯টা ১৫ মিনিটের ‘সীমান্ত এক্সপ্রেস’ গত এক সপ্তাহ ধরে চার ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ছে রাত সাড়ে ১২টায়। একইভাবে চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী ‘সীমান্ত এক্সপ্রেস’ সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ছে চার ঘণ্টা বিলম্বে রাত সাড়ে ১১টায়। আন্তনগর ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ খুলনা থেকে সকাল সোয়া ৭টার স্থলে ছাড়ছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এবং চিলাহাটি থেকে সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেন ছাড়ছে দুপুর দেড়টায়।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে রাজশাহী হয়ে ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন বনলতা ট্রেনটি চলাচল করছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিলম্বে। গতকাল শনিবার রাতে ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাজশাহী পৌঁছায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে। একইভাবে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর সিল্কসিটি ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ৩-৪ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। রাতের ধুমকেতু ও চলছে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে। রাতের রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের মধ্যে চলাচলকারী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বিলম্বে ছেড়ে বিলম্বে পৌঁছাচ্ছে উভয় গন্তব্যে। কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি রাজশাহী খুলনার মধ্যে চার ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। লোকাল ও মেইল ট্রেনগুলির কোনো শিডিউলও নেই। যেমন ইচ্ছে, তেমন চলছে এসব লোকাল ও মেইল ট্রেন।

ট্রেন চালকরা জানান, পথে গতি কমিয়ে চলার কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনগুলোর নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ৪-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি সময় লাগছে। এর মধ্যে পাকশী বিভাগের আওতাধীন পঞ্চগড় থেকে ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী একতা এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া চিত্রা এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন চলছে অস্বাভাবিক বিলম্বে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢালারচরের মধ্যে চলাচলকারী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সবচেয়ে বেশি বিলম্বে চলাচল করছে।

চালকরা আরও জানান, সাধারণ নিয়মে আন্তনগর ট্রেনগুলি ঘণ্টায় ৮০-৯৫ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। তবে রেলপথে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় দিনে গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার এবং রাতে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করছে। এ কারণে প্রতিটি ট্রেনই গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব করছে, ছাড়ছেও বিলম্বে। অস্বাভাবিক বিলম্বে চলাচল করায় শিডিউল বিপর্যয়ে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার ট্রেন যাত্রী। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ট্রেনগুলো চলাচল করছে গতি কমিয়ে। কিছু ট্রেনে নাশকতা ঘটেছে, আবার কয়েকদিন ধরে ঘনকুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমেছে। যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবেই ট্রেনগুলোর গতি কমানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিডিউল মেনে চলাচল করতে পারবে বলে আশা করছি।’