পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সব কিছুতেই গলদ

শহরে সড়ক থাকার কথা ২৫%, আছে ৮%

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সব কিছুতেই গলদ

অপরিকল্পিতভাবে দেশে নগরায়ণ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর নগরায়ণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন- সব কিছুতেই গলদ রয়েছে। সব কিছুতেই গা-ছাড়া ভাব থাকায় একের পর এক কৃষিভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ বৃদ্ধির ফলে ভূমিকম্প ঝুঁকি, পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরের সমন্বয়হীনতা বড় কারণ।

গতকাল শনিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) এক সম্মেলনে এসব অভিমত তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ : সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক এ সম্মেলন আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ (বাপা) ও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক’ (বেন)। বাপার পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ শহর বা নগরাঞ্চলে বসবাস করছেন। আর নগরবাসীর প্রায় ৩২ শতাংশই থাকেন ঢাকায়।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার। প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন বাপা সহসভাপতি ও বেন-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সিপিডি চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। সম্মেলনে ‘নগরায়ণ : ভূমিকম্প এবং অগ্নিঝুঁকি’ নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। নগরস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী। পরিবেশদূষণ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।

বাপা সভাপতি বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও সম্বয়নহীনতায় আমাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। সব সেক্টরেই চরম সমন্বয়হীনতা।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘অতি নগরায়ণের ফলে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নগরায়ণের ঝুঁকি বাড়ছে। সমন্বয়হীনতার কারণে দ্রুত নগরায়ণ সম্প্রসারিত হচ্ছে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে রাস্তার দুই পাশে কৃষি জমিতে অসংখ্য চটকদার বিলবোর্ড দেখা যায়। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ডেভেলপার্স প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্লট কেনার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এই বিলবোর্ড থেকেই বোঝা যাচ্ছে নগরায়ণ কত দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।’

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। যদিও বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ভূমি ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যুক্ত করেছে। তবে সেটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে দেখা যাবে কতটা পরিকল্পিত হয়।’

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘প্রতিবছর দশমিক ৮ শতাংশ হারে নগরায়ণ হচ্ছে। নতুন নগরায়ণ বেশি হচ্ছে নিম্নভূমিতে, এটাই বড় আতঙ্কের বিষয়। তবে ভূমিকম্পের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আমাদের দেশে হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে যদি হয় তাহলে ভবন ধসের চাইতে অগ্নিকাণ্ডে বেশি মানুষ হতাহত হবে। যদি মধুপুর ফল্টে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ঢাকা শহরের ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ পুড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ঢাকায় ৯২০টি পয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। এগুলো আগে থেকে পদক্ষেপ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, রাজধানীতে যেসব ফিলিং স্টেশন রয়েছে সেগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি।

ড. নজরুল ইসলাম সম্মেলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, ‘সাধারণ অর্থে নগরায়ণ হচ্ছে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে নগরীতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নত জীবনব্যবস্থায় উত্তরণের একটি প্রক্রিয়া। জাতিসংঘ নগরায়ণের সংজ্ঞায় বলেছে, দেশের জনসংখ্যার একটি ক্রমবর্ধমান অংশ শহরে বসবাস করার প্রক্রিয়াই হলো নগরায়ণ।

সম্মেলনে বাপার গবেষণাপত্রে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৩৯ হাজার এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করেন।