নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতনের দাবিতে মির্জাপুরে সড়ক অবরোধ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতনের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। আজ বুধবার দুপুর ২টা থেকে প্রায় ৫০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে টাঙ্গাইলের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেন। দুপুর ৩টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকরা জানান, উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তরা স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানায় ৯৫০ জন শ্রমিক কর্মরত আছে। এরা তিন শিফটে কারখানায় কাজ করে থাকেন। কারখানায় কর্মরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিজিএমইএ আর টেক্সটাইলস শ্রমিকরা বিকেএমইএ -এর অধীনে। সম্পতি সরকার কারখানার শ্রমিকদের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে বর্ধিত বেতনের ঘোষণা দেন। গার্মেন্ট শ্রমিকরা ডিসেম্বরে বর্ধিত বেতন পান। কিন্তু টেক্সটাইলস শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন দেওয়া হয়নি। বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইল শ্রমিকদের নতুন বেতন ছাড়ের নির্দেশনা না দেওয়ায় শ্রমিকরা পুরনো হিসেবেই ডিসেম্বররের বেতন পেয়েছেন।
এ ঘটনায় মির্জাপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম মনসুর মুসা ও মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
উত্তরা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিক বাসন্তী রানী বলেন, ‘১৩ বছর আগে ২ হাজার টাকা বেতনে আমি এই কারখানায় যোগ দেই। এখন আমার বেতন ৭ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে ৭ হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন কাজ।’
কারখানার মিক্সিং ম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ২০ বছর আগে থেকে একই কারখানায় কাজ করছেন। তার বেতন ৭ হাজার ২০০ টাকা। ঘর ভাড়া দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। বাকি ৩২০০ টাকা দিয়ে কিভাবে একটি সংসার পুরো মাস চলে।
কারখানার রিং অপারেটর রাব্বি ইসলাম জানান, ৮ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। ৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয় তাকে। বাকি ৪ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে কিভাবে একটি পরিবার মাস চলতে পারে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তো আছেই। গতকাল ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে হাতে করে বাজার আনতে হয়েছে তাকে।
কারখানার শ্রমিক শিরিন আক্তার, এনামূলম, ক্যারান চন্দ্র রায় ও সুজিত রায় জানান, এই কারখানায় অতিরিক্ত কাজের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের নির্দেশে কারখানা বন্ধ থাকলেও সেই কাজ পরবর্তী সময়ে করিয়ে নেন। কিন্তু সেই বর্ধিত কাজের বর্ধিত কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। সরকার ১২ হাজার ৫০০ টাকা শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করলেও কারখানার মালিক সেই বেতন দিচ্ছেন না।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ইম্প্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইল লি. কারখানার শ্রমিকরা নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতনের দাবিতে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মহাসড়কের ওপর আগুন ধরিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
সিবিএ নেতা মাহবুবুল আলম খান বিল্টু জানান, বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত পোশাকশ্রমিকরা বিজিএমইএ আর টেক্সটাইলস শ্রমিকরা বিকেএমইএর অধীনে। সম্পতি সরকার কারখানার শ্রমিকদের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিজিএমইএ শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন ছাড় দিলেও বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইলস শ্রমিকদের বর্ধিত বেতনের কোনো নির্দেশনা দেননি।
দেওহাটা ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান জানান, শ্রমিকরা বর্ধিত বেতনের দাবিতে মহাসড়কে এসে অবরোধ করে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে নজর রেখে অবরোধ তুলে নেওয়ার সফল চেষ্টা করা হয়। অবরোধের ৫০ মিনিট পর দুপুর ৩টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উত্তরা স্পিনিং মিলস লি. এর প্রজেক্ট পরিচালক বিধান সরকার জানান, শ্রমিকরা সরকারের বর্ধিত বেতনের ঘোষণা না বুঝেই আন্দোলন করছেন। সারাদেশে প্রায় ৫৭ লাখ শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। তাদের বেতন বর্ধিত হয়েছে। বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইলস শ্রমিকদের বেতন বর্ধিত করার নির্দেশনা না পাওয়ায় বর্ধিত বেতন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।