আ. লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ভোট কীভাবে কমেছে, ব্যাখ্যা দিলেন জাহাঙ্গীর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থন পাওয়া দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হেরে গেছেন। দুটি আসনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দুই প্রার্থীকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তিনি।
ওই দুজন হলেন গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল ও গাজীপুর-২ আসনের কাজী আলীম উদ্দিন।
তবে গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী গাজীপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (নৌকা)। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২১৮ ভোট তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৭৮৮ ভোট।
গাজীপুর-২ (গাজীপুর সিটির একাংশ ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৪৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১২৯ ভোট।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি হারিনি, হেরেছেন তারা (আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাহিদ আহসান রাসেল)। তারা আওয়ামী লীগকে দুর্বল করেছেন। দুই মন্ত্রীর বোঝা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগের লোকজন ২ লাখ ভোট তাদের বিপক্ষে দিয়েছে।’
ভোটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২০১৮ সালের ভোটে আ ক ম মোজাম্মেল পাইছিলেন প্রায় ৪ লাখ ভোট। এ বছর পাইছেন ১ লাখ ভোট। তাহলে আওয়ামী লীগের ৩ লাখ ভোট তার থেকে সরে গেছে। আর জাহিদ আহসান রাসেল পাইছিলেন পৌনে ৫ লাখ ভোট। এবার ৩ লাখ ভোট ছুইটা গেছে। তার মানে দেখেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর ভোট আওয়ামী লীগ থেকে ছুটে গেছে।’
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, গত বছরের ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। খেলাপি ঋণ থাকার কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিল করেও মনোনয়ন ফিরে না পাওয়ায় মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। নিজের মনোনয়ন বাতিল, দলীয় পরিচয় হারানোর পরও মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৃঢ় অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর আলম। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।
এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ হারাতে হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকে। তার বরখাস্তের পেছনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের হাত ছিল বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ কারণে এবার সংসদ নির্বাচনে নিজে প্রার্থী না হয়ে গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর-২ আসনের কাজী আলীম উদ্দিন ও গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানকে সমর্থন দেন জাহাঙ্গীর আলম।
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এই তিন প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান জাহাঙ্গীর আলম। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গাজীপুরে পাঁচটি আসনের চারটিতেই জয়লাভ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একটি আসনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি চারটি আসনের প্রার্থীর পক্ষে ছিলাম। সেখানে দুজন প্রার্থী হেরেছেন। কিন্তু অন্য দুজন জিতেছেন। আমি সিমিন হোসেন রিমির (গাজীপুর-৪) পক্ষেও ছিলাম। শুধু রেজাউল ও আলীম উদ্দিন হারছেন। মন্ত্রী হওয়ার পর ভোট কমছে, এর মানে হলো তারা এলাকায় সুশাসন দেননি, নেতাদের মূল্যায়ন করেননি। ক্ষমতায় থাকার পর ভোট কমে কীভাবে? এটা প্রমাণের জন্য ভোটে স্বতন্ত্রদের সাপোর্ট দিয়েছি আমি।’
নির্বাচনে যে অবস্থান নিয়েছেন, সে জন্য চাপের মুখে পড়তে পারেন কি না—জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তারা আগেও আমার ক্ষতি করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন; তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আওয়ামী লীগ করে আসছি, দুঃসময়েও আওয়ামী লীগ করি।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার