জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে যা বললেন অলি

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ জানুয়ারী ২০২৪, ১৮:৪১
শেয়ার :
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে যা বললেন অলি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে আন্দোলনরত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের আহ্বান শতকরা ৯৫ ভাগ সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

আজ সোমবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অলি আহমদ।

এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম বৃথা যায় নাই। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে আমরা ৯৫ শতাংশ সফল হয়েছি। জনগণ সচেতন হয়েছে, দেশের ভালমন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। এতে যুব সমাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারও দাসত্ব করার জন্য দেশ স্বাধীন হয় নাই। জনগণ দুর্নীতিবাজ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। তাদের খোলা মাঠে ন্যাংটা করে দিয়েছে। অচিরেই সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেউ কেউ উত্তর কোরিয়ার মডেল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন অলি। ভোটের দিনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে যায় নাই। শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবে সময় কাটিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে শুধু কুকুর ও বানর খেলাধুলা করছে। ছোট ছোট শিশুরা ভোট কস্টিং করেছে, মোটামুটি এটাই ছিল ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রের দৃশ্য।’

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফলের বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সিইসি বললেন, ২৭ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে, পাশ থেকে সচিব বলল, “না স্যার, ৪০ শতাংশ হয়েছে”। এখানে সরকারের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।’

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যাজ ধারণ করা নির্বাচনী এজেন্ট সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন দাবি করে অলি বলেন, ‘ভোট শেষ করার পর কিছু মহিলা ও পুরুষ পুনরায় ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। তারা দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের ধোঁকা দিতে ভোটার উপস্থিতি দেখানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে অনেকে সত্য প্রকাশ করে দেন। এখানেই ওবায়দুল কাদেরের খেলা ধরা পড়ে গেছে। এজেন্টরাও জাল ভোট বাক্সে ভরে। সবাই মিলেমিশে একাকার, সরকারি বাহিনীর কোনো আপত্তি করার সুযোগ ছিল না।’

তিনি আর বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা নিশ্চিত গড়ে ৭- ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিদেশিদের বোকা বানানোর জন্য ৪০ শতাংশ বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই সাংবাদিক নয়। সরকার তাদের নগদ ডলার দিয়ে আমদানি করেছে। অনেকে অবসরে আছেন, পিকনিক করতে এসেছে।’

এ সময় ভোটের আগের এক সপ্তাহের নানা চিত্র তুলে ধরেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘সরকার দলীয় আসল ও ডামি প্রার্থী ঘরে ঘরে টাকা দিয়েছে, ভোটারদের ওপর প্রভাব খাটাতে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি, আগুন সন্ত্রাস, ককটেল বিস্ফোরণ, জ্বালাও-পোড়াও, হানাহানি এবং মারামারির মাধ্যমে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছিল। ভোটের আগের রাতে অনেকেই ঘুমাতে পারেননি। প্রণোদনার নামে বিভিন্ন পদবির জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া হয়েছে। গোপন কক্ষে জাল ভোট দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও বিদেশিরা তা টের পায় নাই।’

অলি আহমদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা খাটছেন এবং খুবই অসুস্থ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বাধ্যগতভাবে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ পান নাই। বিএনপি মহাসচিবসহ বিভিন্ন পদবির ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে নেতাকর্মী জেলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। দুজন সাবেক মন্ত্রীকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। বিএনপির ১২০০ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এরপরও সরকারকে ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয়েছে।’