সিডনিতে রঙিন বিদায় ওয়ার্নারের

ডেভিড ওয়ার্নার

ক্রীড়া ডেস্ক
০৭ জানুয়ারী ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
সিডনিতে রঙিন বিদায় ওয়ার্নারের

সিডনি টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে তৃতীয় দিন শেষেই। গতকাল হার ঠেকাতে অলৌকিক কিছু দরকার ছিল পাকিস্তানের। অনুমিতভাবেই রূপকথার কোনো প্রত্যাবর্তন করতে পারেননি সফরকারীরা। তৃতীয় ও শেষ টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এ জয়ে সিরিজে ধবলধোলাই হলো পাকিস্তান। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে এর চেয়ে দুর্দান্তভাবে বিদায় জানাতে পারত না অজিরা।

আগে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থামে ৩১৩ রানে। জবাবে ২৯৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক দল। দ্বিতীয় ইনিংসে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ১৩০ রানের লক্ষ্যে হেসে-খেলেই পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে হারলেও দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে ম্যাচসেরা হয়েছেন পাকিস্তানি পেসার আমের জামাল। অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের হাতে উঠেছে সিরিজসেরার পুরস্কার।

বিদায়ী টেস্টে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসে ফিরেছেন ৩৪ রানে। গতকাল ৭৫ বলে ৫৭ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে আসেন তিনি। এ সময় গোটা সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড দাঁড়িয়ে থেকে কুর্নিশ করে বিদায় জানায় ঘরের ছেলেকে। আর ওয়ার্নার যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন তো করতালি আর গগনবিদারি চিৎকারে সিডনি প্রায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন দর্শকরা!

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণাটা আগেই দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। তৃতীয় টেস্ট চলাকালে জানিয়ে দিলেন ওয়ানডে সংস্করণেও ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন তিনি। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আরও কিছুদিন খেলে যেতে চান বাঁহাতি ওপেনার। তার স্বপ্ন কুড়ি ওভারের বিশ^কাপ জেতা। গতকাল ম্যাচ শেষে ওয়ার্নার বলেছেন, ‘আমার শেষটা হবে টি-টোয়েন্টি দিয়েই। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম এই সংস্করণ দিয়েই। শেষও করব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই। এটিই সবচেয়ে উপযুক্ত। এ খেলাটাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আরও একটি বিশ^কাপ জিততে চাই।’

কথা বলার সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি ওয়ার্নার। নিজে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন ভক্তদের। একটা পর্যায়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। তার চোখে ভর করে সমুদ্র। সব মিলিয়ে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অন্যরকম একটা আবহ তৈরি হয়েছিল। এমনটি হওয়ারই কথা। ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা একজন ওপেনারের যে বিদায়ের মঞ্চ এটা। কেবল নিজ দেশের দর্শক কিংবা সতীর্থরাই নয়, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান দলও অভিনব কায়দায় সম্মান জানিয়েছে তাকে। সাজিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ২২ গজ ছাড়ার সময় পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা তার সঙ্গে করমর্দন করেন; পিঠ চাপড়ে দেন। হেলমেটে চুম্বন এবং ব্যাট হাতে দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দেন ৩৭ বছর বয়সী এই ওপেনার। তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলিঙ্গনে বাঁধেন ওয়ার্নারকে। এমনকি তাকে জড়িয়ে ধরেন সতীর্থ উসমান খাজার মা। কারণ কেবল খাজাই নয়, ছোটবেলা থেকে ছেলের বন্ধু ওয়ার্নারও তার কাছে ডানপিটে ছিলেন। আবেগ তো তাকে ছুঁয়ে যাবেই!

বর্ণিল ক্যারিয়ারে একটা দুঃখ আছে ওয়ার্নারের। ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও এক বছর নির্বাসন পান। যাকে দিয়ে দলীয় পরিকল্পনা সফল করেছিল অস্ট্রেলিয়া সেই ক্যামেরন ব্যানক্রফট ৯ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন। উদীয়মান সেই ক্রিকেটার হারিয়ে গেছেন; কিন্তু স্মিথ-ওয়ার্নার দুজনই প্রত্যাবর্তন করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ফের অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে চাপান। এই টেস্টে স্মিথও আছেন। ওপেনিংয়ে ওয়ার্নারের শূন্যস্থান পূরণ করতে চান। যদিও তার আশাটা পূরণ হচ্ছে না। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তো বলেই দিয়েছেন, ‘(ওয়ার্নারের) বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে, বিশেষ করে সে যেভাবে খেলে থাকে।’

তথ্য

লাল বলের ক্রিকেটে ওয়ার্নার এক ইনিংসে করেছেন ৩৩৫ রান, যা টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।

এক টেস্ট সেঞ্চুরি ও ডাক মারার অভিজ্ঞতা আছে ওয়ার্নারের।

টেস্ট ক্রিকেটে টানা ছয় হাফ সেঞ্চুরির নজির আছে ওয়ার্নারের।

এক টেস্টে সর্বোচ্চ ৬টি ক্যাচ ধরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।

ওয়ানডেতে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বোচ্চ ১৩৮৮ রান। স্বপ্নের ২০১৬ সালে ৭টি সেঞ্চুরিও করেছিলেন ওয়ার্নার।

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সেরা ক্রিকেটার।

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন ওয়ার্নার।

২০১৭ ও ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার পান তিনি।

২০১২ সালে ব্র্যাডম্যান উদীয়মান বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন

এই ওপেনার।

ওয়ার্নারকে নিয়ে

ওয়ার্নারের বিদায়ী উপহার হিসেবে আমরা তাকে একটি প্রশংসাসূচক টোকেন দিতে চাই। এটি বাবর আজমের জার্সি, যেখানে পাকিস্তানের বর্তমান টেস্ট দলের সবার সই আছে। ওয়ার্নারের জন্য শুভকামনা।

শান মাসুদ, অধিনায়ক, পাকিস্তান

এটি ডেভির (ওয়ার্নার) শেষ টেস্ট ম্যাচ। বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে; বিশেষ করে সে যেভাবে খেলে থাকে। সে সত্যিই এক কঠিন ব্যক্তিত্ব। অ্যাডিলেডে যাওয়ার আগে এক সপ্তাহ বাড়িতে কাটাব। এই সিরিজ আর ডেভির ক্যারিয়ারকে অনুধাবন করার জন্য এটিই ভালো সময়।

প্যাট কামিন্স, অধিনায়ক, অস্ট্রেলিয়া

ক্যারিয়ার

টেস্ট : ১১২

রান : ৮৭৬৬

আরও পড়ুন:

বিপাকে আলভেস

সেঞ্চুরি : ২৬

ফিফটি : ৩৭

সর্বোচ্চ: ৩৩৫*

গড় : ৪৪.৫৯

স্ট্রাইক রেট : ৭০.১৯

রান

৬৯৩২