প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটাররা
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা বনাম স্বতন্ত্র ঈগলের লড়াই। জাতীয় পার্টিসহ আরও তিনটি দলের প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় নেই তারা। সক্রিয় নেই প্রচারেও। সার্বিক চিত্র বলছে, এখানে ভোটের দিনে মূল লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী শামীম হক এবং ঈগলের প্রার্থী এ. কে. আজাদের মধ্যে। এদিকে সদর আসনের নৌকা সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোট চাইলেও ঈগলে ভোট দিতে পারেন এমন ভোটাররা রয়েছেন নীরব। ফরিদপুরের ভোটের রাজনীতিতে এখন জোর আলোচনায় এ নীরব ভোটাররা। তারা প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, এমন অনেক কর্মী-সমর্থক আছেন, যারা বর্তমানে এক প্রার্থীর হয়ে কাজ করলেও ভোট দিতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে। তাদের ধারণা, শেষ দিনে ভোটের অঙ্কে ফ্যাক্টর হতে পারে এই নীরব সমর্থন। এ ছাড়াও এ আসনে নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে সংখ্যালঘুসহ নতুন ভোটার মিলিয়ে প্রায় এক লাখ ভোট।
সরেজমিন ফরিদপুর-৩ আসনের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকা এবং স্বতন্ত্র ঈগল ছাড়া বাকিরা নেই প্রচারের মাঠে। দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রচারে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন দুই প্রার্থী, করছেন জনসভা। বেশ কয়েকটি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা বলছেন, যিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন তাকেই নির্বাচিত করবেন তারা। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ঈগল মার্কার প্রার্থী এ. কে. আজাদকে এগিয়ে রাখছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে এ. কে. আজাদের ফরিদপুরে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ভাবাচ্ছে ভোটারদের। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষ বড় করে দেখছেন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের বিষয়টিকে। আজাদ শিল্পপতি হওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে পুরো নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বিষয়টি এবারের নির্বাচনে ভাবাচ্ছে ভোটারদের।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
জানা যায়, নির্বাচনে আসনটিতে গুরুত্ব পাবে এলাকার ৬৩ হাজার নতুন ভোট। স্থানীয়রা বলছেন, নতুন ভোটাররাই পাল্টে দিতে পারে ফলাফল। এ ছাড়া এই আসনে হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভোটার আছে প্রায় ত্রিশ হাজার। ভোটের অঙ্কে তারাও রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। সেখানেও এই ভোটও নৌকা আর ঈগলের মধ্যে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফরিদপুর সদর আসনে বিএনপির ভোটের পরিমাণও অনেক। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় সমর্থকরা ভোট দিতে গেলে তার সুবিধাও পেতে পারে নৌকার প্রতিপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি আমাদের সময়কে বলেন, এবারের নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগের ভোটই ভাগাভাগি হবে। কে কতটুকু নিতে পারবে এটা তার ক্যারিশমা। তবে এই আসনে বিএনপি এবং নিরপেক্ষদের ভোটও আছে অনেক। উভয় প্রার্থীই চেষ্টা করছেন তাদের কেন্দ্রে আনতে। বিএনপি সমর্থকরা ভোট দিতে এলে সুবিধা পেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। পাশাপাশি তার আওয়ামী লীগেরও ভোট আছে।
আরও পড়ুন:
জোটের ভাগে অনেক নেতা নৌকা হারাবেন
তবে নৌকা সমর্থকরা বলছেন, ফরিদপুর সদর আসনে নৌকা সুসংগঠিত। যারা অন্যদের পক্ষে কাজ করছিলেন তারাও দলে দলে নৌকার পক্ষে ভিড়তে শুরু করেছেন। স্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার মঙ্গলবারের জনসভার পর ফরিদপুর সদর আসনের নৌকার পালে জোর হাওয়া লেগেছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শ্যামল কুমার ব্যানার্জি আমাদের সময়কে বলেন, এখানে নৌকা প্রতীকের একটা বিশেষ ভোট আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট টানার চেষ্টা করলেও নৌকার গতি প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা নৌকা পছন্দ করে তারা নৌকার সঙ্গেই আছে। দু-চারজন যারা অন্যদিকে আছে, তারাও শেষ পর্যন্ত নৌকার পক্ষ নেবে। শেখ হাসিনার জনসভার পর থেকে সবাই নৌকার দিকে ভিড়তে শুরু করেছে। জয়ের ব্যাপারে আমরা সুনিশ্চিত।
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা