জোটের ভাগে অনেক নেতা নৌকা হারাবেন

মুহম্মদ আকবর
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
জোটের ভাগে অনেক নেতা নৌকা হারাবেন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আজকালের মধ্যেই ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান। এদিকে আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে ‘মতবিনিময় সভা’ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এবারের মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন চার বিভাগের ২৫ জন এমপি। এর মধ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৩ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ১২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন।

তবে আজকালের মধ্যে ৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণাই শেষ কথা নয়; কারণ শরিক দলগুলোকে বেশ কিছু আসন ছেড়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। সে ক্ষেত্রে শরিকদের সঙ্গে দরকষাকষি শেষ হওয়ার পর জানা যাবে কারা কারা নৌকার মনোনয়ন পেলেন, আর কারা কারা পেয়েও হারালেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ তফসিল পরিবর্তন না হলে ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবেÑ বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যাবে কিনা।

সূত্র জানায়, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জোটের সঙ্গে আসন বণ্টনের খসড়া করে রাখা হবে। চূড়ান্ত হবে ৩০ নভেম্বরের পরে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নেতা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ মহাজোট করবে কিনা, এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ১৪ দলের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করার বিষয়টি নিশ্চিত। যেসব আসনে জোটের প্রার্থী থাকবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে কিংবা না দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও কার কার কপাল পুড়ছে এই প্রশ্ন এখনো অনেক প্রার্থীর।

এবার অনিবন্ধিত দুই শরিক দলের দুজন এবং নিবন্ধিত শরিক দলের এক নেতা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। অন্য শরিক দলগুলো ভোটে যাবে নিজস্ব প্রতীকে। তবে গতকাল নিজ দলের আংশিক প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষণা করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চাই।’

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট করেছিল দলটি।

চৌদ্দ দলের শরিকদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩০ আসনে দলীয় ফরম বিক্রি করেছে। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি এখনো। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আমাদের সময়কে জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করে জোটের প্রার্থী বাছাই করা হবে।

আরেক শরিক দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল তাদের ১০ নেতাকে মনোনয়ন ফরম দিয়েছে। তবে একটি আসনে তারা নৌকা প্রতীকেই লড়তে চান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে গণআজাদী লীগ ও বাসদ।

তরিকত ফেডারেশন ১৫০ আসনে দলীয় ফরম বিতরণ করেছে। ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী আমাদের সময়কে জানান, তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবেন। এর বিকল্প ভাবনা তার নেই। জোটের কাছে তিনি ১৫টি আসন চাইবেন।

এ ছাড়া গণতন্ত্রী পার্টি ১০ থেকে ১২টি আসন চাইতে পারে। কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, ন্যাপসহ জোটের অন্য সব দল ৬ থেকে ৮টি আসন চাইতে পারে। আসন বণ্টন নিয়ে শিগগিরই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন গণআজাদী লীগের নেতা এসকে শিকদার।

জানা গেছে, জোটকে আসন ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্যান্য কারণেও এবার আওয়ামী লীগের অনেক সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাবেন না। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বিনোদন অঙ্গনের কয়েকজন তারকাও আছেন মনোনয়ন দৌড়ে। ফলে তাদের মনোনয়ন দিতে গিয়েও আওয়ামী লীগের অনেক এমপির কপাল পুড়তে পারে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের জানান, আজ না হলেও আগামীকাল রবিবার ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন শেখ হাসিনা রবিবার নৌকা মার্কার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার সকাল ১০টায় ওই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়নপত্রের রিসিভড কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ যথাসময়ে মতবিনিময়ে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।