যে হুঁশিয়ারি দিলেন বিএনপির মঈন খান
‘ভুয়া-ধাপ্পাবাজি’ নির্বাচন করে সরকার টিকে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণের আগে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ৭ জানুয়ারির ভোটের পর আপনারা কী করবেন? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, এই সরকারকে বুঝতে হবে, এটা ২০২৪ সাল, ২০১৪ সাল নয়। সরকার যদি মনে করে থাকে একটি ভুয়া-ধাপ্পাবাজির ভোট করে তারা আবার ৫ বছরের জন্য নিশ্চিত করে নেবে, এটা কোনো দিন হবে না।’
মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। আমরা রাজপথে থাকব, বুলেট মোকাবিলা করব, আমরা গ্রেনেড মোকাবিলা করব কিন্তু আমরা শান্তিভঙ্গ করব না। এই সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য ইনশাআল্লাহ আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বহির্বিশ্বের চাপের পরও নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে নয়, নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। যেদিন ওরা মনোনয়ন দাখিল করেছে, সেদিনই একতরফা নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ঠিক করে নিয়েছে কোন সিটে কোন এমপি। ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদের কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ইতোমধ্যে আমি বলছি বিশ্বের শুধু গণতন্ত্রকামী সরকারগুলো নয়, আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিদেশে যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আছে যেমন অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশল,হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তারা প্রত্যেকে ইতোমধ্যে বলেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর সরকার ক্র্যাকডাউন করে এ দেশের গণতন্ত্রকে তারা হত্যা করেছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার কেন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তার ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘তারা ক্ষমতার মাধ্যমে দুর্নীতি করে, মেগা দুর্নীতি করে, তারা অবৈধ সম্পদ-অর্থ-বিত্ত-বৈভব সংগ্রহ করছে, যার প্রমাণ ইতোমধ্যে আজকে দেশে-বিদেশে সকল পত্র-পত্রিকায় দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, গত ১৫ বছরে এই সরকার আমাদের জাতীয় যে দেনা বিদেশের, সেটা ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, ২০ গুণ এই জাতির দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের ট্যাক্সের ওপর এবং সেটা তারা বিদেশে পাচার করেছে, লোপাট করেছে, সেই টাকা দিয়ে তারা কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছে, দুবাইতে তারা থার্ড গুলশান তৈরি করেছে, তারা এই টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছে। আজকে স্পষ্টভাষায় বলে দিতে হবে যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ থেকে ৫২ বছর আগে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ সৃষ্টি করেছিল গণতন্ত্রের জন্য, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আপনাদের মনে আছে, পাকিস্তান যেটা আজকে বাংলাদেশে তার সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে নিয়েছিল তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এই আওয়ামী বাকশালী সরকার দেশে একটি অলিগার্কি সৃষ্টি করেছে যার মাধ্যমে তারা আজকে ২২ পরিবারের পরিবর্তে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে ২২০টি পরিবার তৈরি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ লুটে নিচ্ছে। আজকে তার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। রাজপথে আপনারা দেখেছেন ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে আমরা একবছর ধরে গতবছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ নিয়ে প্রতিবাদ করেছি, সমাবেশ করেছি।’
প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় কৃষক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আবদুল মঈন খান পথচারী, যানবাহনে থাকা সাধারণ যাত্রী ও ফুটপাতের হকারদের হাতে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন।
এ সময়ে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কৃষক দলের সহসভাপতি জামাল উদ্দিন খান মিলন, ভিপি ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় নেতা ফেরদৌস পাটোয়ারি, মিজানুর রহমান লিটু, ওবায়দুর রহমান টিপু, শাহ আবদুল্লাহ আল বাকি, শাহ মনিরুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফিক, জাহাঙ্গীর আলম, হারুনার রশীদসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।