দেশে বায়ুদূষণে বছরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০০
শেয়ার :
দেশে বায়ুদূষণে বছরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু

বাংলাদেশে বায়ুদূষণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এ কারণে বছরে জিডিপির ক্ষতি হচ্ছে শতকরা ৮ ভাগ। এই বায়ুদূষণে ৩০ শতাংশ দায়ী পাশের দেশ ভারত। 

দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ রবিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বায়ুদূষণের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা করেন বক্তারা। 

তারা জানান, ভারত থেকে উন্মুক্ত আকাশ বেয়ে আসা দূষিত বাতাস বাংলাদেশের বাতাসকে দূষিত করছে। এ ছাড়া স্থানীয় ইটভাটা, উন্মুক্ত স্থানে জ্বালানি, ময়লা আবর্জনা, ট্রাকে মাটি-বালি পরিবহন বায়ুকে দূষিত করছে। তাই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে সব সংস্থা ও জনপ্রতিনিধির সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। 

বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি, মনিটরিং ও সমন্বয় দরকার। একইসঙ্গে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থানীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তঃসমন্বয় থাকলে নগরবাসীর স্বস্তি আসবে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের যে চিত্র তা সম্ভব হয়েছে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে। এতে মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে এবং নগরায়ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য যেকোনো উন্নত দেশের মতোই আমাদের দেশেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে নানারকম পরিবেশগত দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রথম থেকেই যদি আমরা আমাদের পরিবেশ দূষণের বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে আমাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের বিষয়গুলো আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। বাতাস এমন একটি মাধ্যম, যা ধনী-গরিব সবার স্বাস্থ্যের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুদূষণের উপাদান সমূহ যেমন বস্তুকণা, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড কার্বন, মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন দূষণের পরিমাপ করে সেসব দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে যে ধরনের কর্মযজ্ঞ দরকার, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে কর্মযজ্ঞের কারণে কিছুটা বায়ুদূষণ হচ্ছে। তবে টেকসই উন্নয়নে সরকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি, বায়ুমান বজায় রেখেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।’ 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘বছরে সাড়ে ১৩ কোটি টন মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হয়। এতে পরিবেশ ক্ষতির পাশাপাশি বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ১৮ ভাগ এবং ইটভাটায় ১১ ভাগ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ব্যবহারেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যানবাহন পরীক্ষার জন্য বিআরটিএতে ৪টি পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত সোলার কুকার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ সব কাজ সম্পন্ন হলে অনেকাংশে বায়ুমান উন্নীত হবে।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে এই কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ এ শওকত চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বি. জে মনিরুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. জিয়াউল হক, আমিরুল ইসলাম, ড. আব্দুস সালাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক মোতাহার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এম এ আক্তার হোসেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান ও উপসচিব আমিনূল এহসানসহ আরও অনেকে।