শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা যবিপ্রবি ড্রাইভারের

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৬
শেয়ার :
শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা যবিপ্রবি ড্রাইভারের

নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সিনিয়র ড্রাইভার মো. মফিজুর রহমান আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গত শুক্রবার রাতে যশোরের আমবটতলায় নিজ বাড়িতে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অবস্থায় ওইদিন রাতে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে যশোর সদর হাসপাতাল ও পরবর্তীকালে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

এদিকে, গতকাল শনিবার যবিপ্রবির বাস ড্রাইভার ও হেলপাররা মফিজুরের আত্মহত্যার চেষ্টার পেছনে পরিবহন প্রশাসকের অসৌজন্যমূলক আচারণকে দায়ী করে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. জাফিরুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন দপ্তরের কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন। তেল মাপা কমিটি কর্তৃক মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও পরিবহন প্রশাসক বিভিন্ন সময় কর্মরত ড্রাইভার-হেলপারদের তেল চোর বলেন। 

এমনকি তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও বলেন, ‘‘তোরা তো তেল চোর, তোদের নামজ পড়ে কি হবে?’’ এভাবে তাদের বিভিন্নভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেন। প্রত্যেক ড্রাইভার-হেলপারদের সঙ্গে তুই-তুকারিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তার ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবহন দপ্তরের ড্রাইভার-মেকানিক-হেলপার ব্যবহার করেন। 

এ ছাড়া একজন সিনিয়র ড্রাইভারকে বিনা অপরাধে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সিনিয়র ড্রাইভার মফিজুর রহমানকে অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং অপমানিত হওয়ায় রাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে যান।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অগ্নিদগ্ধ মফিজুর হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে বলে যান আমার যদি কিছু হয় তুমি যানবাহন কর্মকর্তা ও পরিবহন প্রশাসকের নামে মামলা করবে।

এদিকে, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পরিবহন প্রশাসক ড. মো. জাফিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে অপসারণ করে সহকারী পরিবহন প্রশাসক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে পরিবহন প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. জাফিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। যেটি হয়েছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের দুইটি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় দুইজন ড্রাইভার এমনিতে বসে ছিল, অফিসে কোনো পিওন না থাকার কারণে উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে তাদের থেকে একজনকে অফিসের কাজের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং এটা নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে কোনো ড্রাইভারদের সঙ্গে আমার খারাপ সম্পর্ক নেই। সে এমনিতেই পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিল। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হেলপারের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন মফিজুর। পারিবারিক কারণে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন। তার আত্মহত্যা চেষ্টা করার পিছনে আমি কোনোভাবে দায়ী নই।’

ড্রাইভারদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তেল চুরি, পাইপ চুরিসহ নানা অপকর্ম না করতে পারায় কিছু ড্রাইভারদের ব্যক্তিগত সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমারা কয়েকজনকে এ রকম অপকর্ম প্রমাণসহ ধরেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান। হয়তো বা এ কারণে ব্যক্তিগত আক্রোশের ফলে আমার নামে এমন অভিযোগ করেছে।’

এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসনে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে।’ 

 মফিজুরের আত্মহত্যা করার বিষয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে মফিজুরের সহকর্মীদের থেকে জানা গেছে, তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন।