কর্মকর্তাদের অপেক্ষায় আটকে আছে সেবা

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
কর্মকর্তাদের অপেক্ষায় আটকে আছে সেবা

বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট সেবা কানাডায় চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে অনেক দিন আগেই। এখন বাংলাদেশ থেকে একদল কর্মকর্তা কানাডায় গিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা। তবে কর্মকর্তারা সেখানে না যাওয়ায় সব প্রস্তুতি শেষ করেও ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করতে পারেনি কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন। এতে বিপাকে পড়েছেন কানাডায় বসবাসরত শিক্ষার্থীসহ অনেক বাংলাদেশি।

জানা গেছে, কানাডা হাইকমিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় প্রতিদিনই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা হারানো পাসপোর্ট পুনরায় ছাপার আবেদনকারীদের। ফলে অনেকেই প্রয়োজনে দেশে যেমন আসতে পারছেন না, তেমনি সংগ্রহ করতে পারছেন না কানাডায় কাজের অনুমতিপত্র (ওয়ার্ক পারমিট)। পাচ্ছেন না স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি। বারবার ঘোষণা দিয়েও এ সেবা চালু করতে ব্যর্থ হয়েছে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কার্যক্রম চালুর জন্য কোন কোন কর্মকর্তা এবং টেকনিশিয়ান কানাডায় যাবেন, তা নির্ধারণ করতে না পারায় কানাডায় ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের মেশিনপত্র পৌঁছে গেছে। আমাদের যারা যাবে, তাদের অনুমোদন প্রয়োজন আছে, ভিসার বিষয় আছে। এখন আমাদের টেকনিক্যাল টিম এবং কর্মকর্তাদের টিমের কয়েক দিন আগে ভিসা হয়েছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে, আশা করছি নির্বাচনের পরই সেবা চালু হবে।’

ই-পাসপোর্ট সেবা চেয়েও পাননি এমন দুজন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশির হাইকমিশনে পাঠানো ই-মেইল আমাদের সময়ের হাতে এসেছে। এদের একজন কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল সিফাত। তিনি হাইকমিশনে পাঠানো বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমার আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই পাসপোর্ট তারা প্রসেস করতে পারবেন না। কেননা এটি ই-পাসপোর্ট।’

১৩ সেপ্টেম্বরে পাঠানো ফাহিমের এই ই-মেইলের জবাব দেওয়া হয়েছে ৪ ডিসেম্বর। তাতে হাইকমিশন বলছে, ‘কানাডায় ই-পাসপোর্ট সেবা এখনও চালু হয়নি। খুব দ্রুতই এ সেবা চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

কিন্তু কবে চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি কমিশন। এদিকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে না পারায়, কানাডার মতো উচ্চ ব্যয়ের দেশে বেকারত্ব নিয়ে হতাশায় ভুগছেন ফাহিম।

ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদাব আলী শারিনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে কয়েক মাসের মধ্যে। যেহেতু তার ই-পাসপোর্ট, কীভাবে তা নবায়ন করা যাবে, তা জানতে চেয়ে একাধিকবার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেও সমাধান পাননি।

গত ৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীকে পাঠানো অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক চিঠির সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর হাইকমিশনারের অনুরোধে জরুরি ভিত্তিতে আমেরিকার ভেরিডোস কোম্পানির দুজন টেকনিশিয়ান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের পাশাপাশি পাসপোর্ট অধিদপ্তেরর মূল সার্ভারের সঙ্গে কমিশনের সংযোগ স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কর্মকর্তাদের আরেকটি বিশেষ দল কানাডায় গিয়ে উদ্বোধন না করা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।

ওই চিঠিতে হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এটি খুবই অনভিপ্রেত এই কারণে যে, ই-পাসপোর্ট সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে থাকা মানুষের প্রয়োজনীয়তার চেয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।’ চিঠিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে আনুষ্ঠানিকতার জন্য কর্মকর্তাদের কানাডায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানান খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েও ঢাকা থেকে কোনো টেকনিক্যাল টিম না আসায় সংযোগটি চালু করা যায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কানাডায় এ উপলক্ষে যেসব কর্মকর্তা আসবেন, সেটিতে কারা থাকবেন তা ঠিক করতে না পারায় বিলম্ব হয়েছে। আমরা তাদের পরিষ্কার করে বলেছি, উদ্বোধন পরেও করা যাবে, সেবাটি আগে চালু হোক। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তারা হয়তো ভাবছেন, চালু হয়ে গেলে তাদের কানাডায় আসার যৌক্তিকতা আর থাকবে না।’

এই কার্যক্রমে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ‘অটোয়ায় আমাদের অফিসে চারটি মেশিন বসানোর সক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা আমাদের ছয়টি মেশিন পাঠিয়েছে। আমাদের দুটি এমআরপি মেশিন রাখতে হচ্ছে। ফলে চারটি ই-পাসপোর্ট মেশিন পড়ে থাকবে।’