ডিসেম্বরেও নেই শীতের প্রকোপ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশে ডিসেম্বরেও শীতের প্রকোপ নেই বললেই চলে। বিগত কয়েক বছরের ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা থাকতো ১২ ডিগ্রির আশেপাশে। কিন্তু এখন তা ১৬ ডিগ্রির নিচে নামছেই না। কখনও কখনও থাকছে এরচেয়েও বেশি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ হলেও এবার কেবল দেশের সর্ব উত্তরের অঞ্চল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ৯ এর নিচে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী এই মাসে শীত তীব্র হওয়ার কথা। মাসের শেষে শৈত্যপ্রবাহের কথাই আমরা বলেছিলাম। কিন্তু বঙ্গোপসাগরসহ সারা দেশের ঊর্ধ্ব আকাশে একটি বাতাসের ঘুর্ণন (সঞ্চারণশীল বাতাস) চলছে। গরম বাতাস আর ঠান্ডা বাতাসের এই ঘুর্ণনের ফলে শীতের বাতাস নিচে নামতে পারছে না। ইতোমধ্যে কয়েক জেলায় বৃষ্টি হলেও আকাশ পরিষ্কার হয়নি। এর ফলে বাতাসে জ্বলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি। এসব কারণে শীতের হিমেল বাতাস আমরা পাচ্ছি না।’ তিনি জানান, চলতি মাসে আর তাপমাত্রা খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই। দুই একটা এলাকায় ১০ ডিগ্রিতে নামলেও শৈত্যপ্রবাহ আর নাও হতে পারে।
ডিসেম্বরের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। তবে এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। মাসের শেষার্ধে দেশের কোথাও কোথাও একটি থেকে দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন এবং অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ডিসেম্বর মাসেও শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্লোবাল সার্কুলেশনের (বাতাসের সঞ্চালন) পরিবর্তন ঘটছে। এই সঞ্চালন বদলে গেছে। এসব কারণে যে মাসে শীত পড়ার কথা সে মাসে আমরা শীতের আমেজ পাচ্ছি না। আবার দেখা যাবে যখন শীত পড়ার কথা না, সেই সময়ে আমরা শীতের আমেজ পাচ্ছি।
গত বছরের (২০২২ সালে) ২৪ ডিসেম্বর দেশের উত্তরের জেলায় নওগাঁ ও পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বইছিল শৈত্যপ্রবাহ। সেদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেঁতুলিয়া ও বদলগাছিতে ছিল এই তাপমাত্রা। এছাড়া প্রায় আট অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। সৈয়দপুর ও দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ৩, বরিশালে ১০ দশমিক ৪, চুয়াডাঙ্গা, তাড়াশ ও রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫, মাদারিপুরে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এক বছর পর একই দিনে, অর্থাৎ এ বছর ২৪ ডিসেম্বর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দিনাজপুরে ১৩ দশমিক ১, বদলগাছিতে ১২ দশমিক ৫, রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ২, সৈয়দপুরে ১৪ দশমিক ৩ এবং যশোরে ১৫ দশমিক ৬, ঈশ্বরদীতে ১৩ দশমিক ২, বরিশালে ১৪ দশমিক ৬, মাদারীপুরে ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এটি দেশের ‘শীতের হটস্পটগুলোর’ একটি। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে এখানে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের তিন বিভাগে গড় তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। আজ সোমবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে, শীতের প্রকোপ বাড়বে। তবে এখনো শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদেরা।