ঢাকায় এল ভোলার গ্যাস
দক্ষিণের জেলা ভোলার গ্যাস এল ঢাকায়। কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) হিসেবে সিলিন্ডারে ভরে এ গ্যাস ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্যাস সরবরাহের উদ্ধোধন করা হয়।
বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি এ গ্যাস ভোলা থেকে ঢাকায় সরবরাহ করছে। আজ ঢাকার ধামরাইয়ের একটি কারখানায় তারা গ্যাস সরবরাহ করেছে। তারা যে সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ করছে, তার প্রতি সিলিন্ডারে সাড়ে ৩ হাজার ঘনমিটার গ্যাস থাকবে। বিশেষ ট্রাকে করে এটি পরিবহন করা হচ্ছে। প্রতি ঘনমিটারের সিএনজির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এভাবে গ্যাস সরবরাহের এটি প্রথম ঘটনা। সিলিন্ডারের পাশাপাশি ভোলার গ্যাস বাইরে আনতে বরিশালের সঙ্গে একটি পাইপলাইন করা হবে। এরপর তা খুলনার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। উত্তরাঞ্চলেও গ্যাস সরবরাহের চিন্তা আছে। রংপুর পর্যন্ত ইতিমধ্যে গ্যাস পাইপলাইন চলে গেছে।’
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, ‘দিনে এখন ৫০ লাখ ঘনফুট সরবরাহ করা হবে। তবে ভোলার গ্যাস সরবরাহ কেবল শুরু। এটি ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে। সম্পদ মাটির নিচে না রেখে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই আরও বেশি কূপ খনন করে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি কমাতে পারলে অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ সময় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, চাহিদা মেটাতে নানা উপায়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। এলএনজি আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আনার চিন্তা করা হচ্ছে।’
ইন্ট্রাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে আগে থেকেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। বর্ষাকাল, বৈরী প্রকৃতিসহ নানা কারণে সরবরাহ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে।’
চলতি বছরের ২১ মে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি চুক্তি সই করে। চুক্তির আওতায় ভোলা থেকে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭.৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে ইন্ট্রাকো লিমিটেড।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, সমকালীন সমস্যাকে মিটিয়ে এগিয়ে যাওয়া সরকারের বড় লক্ষ্য। যেসব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা বেশি সেখানে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে শুধু সরবরাহ বাড়বে না, সংকটও দূর হবে।
একই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জানিয়েছিলেন, ভোলা এলাকায় ২ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ জানান, ভোলা গ্যাস ফিল্ডে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে সব গ্রাহক মিলে চাহিদা রয়েছে ৯২ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রাহক না থাকায় ২৭ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় দেশের অন্য অঞ্চলে নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোতে প্রমাণিত মজুদ ধরা হয় ২০ দশমিক ৫৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট), সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে আরও প্রায় ৮ টিসিএফ মজুদ ধারণা করা হয়। এ যাবৎ প্রায় ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফের মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে, সে হিসাবে আর মাত্র ৮ বছরের গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে।