৩ দিন পর ইউপি সদস্যসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৪
শেয়ার :
৩ দিন পর ইউপি সদস্যসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনার তিন দিন পর নিখোঁজ ইউপি সদস্যসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো চারজনে।

আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই দুই মরদেহের মধ্যে একটি ঘটনাস্থলের পাশে এবং অপরটি টঙ্গীবাড়ী উপজেলার চৌসার গ্রামের পদ্মা নদী এলাকায় ভাসতে দেখে স্থানীয়রা।পরে তারা লাশ দুটি উদ্ধার করে হাসাইল বাজার এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় নিহতের স্বজনরা তাদের লাশ দেখে শনাক্ত করেন। 

উদ্ধারকৃতরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) এবং রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩৫)।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন মুন্সীগঞ্জ সদরের চর আবদুল্লা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. হাসনাত জামান। তিনি বলেন, নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মরদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের আত্মীয়স্বজনরা মরদেহ দুটি তাদের বলে শনাক্ত করেছেন। মরদেহ দুটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। 

এ ঘটনায় ইতিমধ্যে টঙ্গীবাড়ী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ঘাতক বাল্কহেডের তিন শ্রমিককে আটক করে টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটক তিন শ্রমিক জনরোষ থেকে বাঁচতে জব্দকৃত বাল্কহেডের ইঞ্জিন কক্ষে তেল রাখার ড্রামে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ছিলেন।

মো. হাসনাত জামান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশ বাল্কহেড তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করে। তবে ঘটনার পর বাল্কহেডের চালক পালিয়ে গেছেন। বাল্কহেডটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার দশআনি এলাকার মো. নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বলে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের হাসাইলের চর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের বাল্কহেডটি চাঁদপুর থেকে বালু আনতে পদ্মার শাখা নদী দিয়ে মূল নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে অসাবধানতাবশত বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। 

এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফার (১৫) লাশ ঘটনার পরপরই উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নিখোঁজ অপর দুই ব্যক্তির মরদেহ আজ উদ্ধার করা হলো। 

এর আগে রবিবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী নৌযান দুর্ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি নদী থেকে টেনে তোলা হয়। 

এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক উপজেলার হাসাইল গ্রামের আজিজ বেপারীর ছেলে মো. আলামিন বেপারী বাদী হয়ে এ ঘটনায় বাল্কহেডের মালিক ও চালকসহ পাঁচজনকে আসামি করে টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাল্কহেডের তিন শ্রমিককে আটক করে সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।  

আটককৃতরা হলেন- বাল্কহেডের ইঞ্জিন মিস্ত্রি মতলব উত্তর থানার দশআনি এলাকার মৃত আবুল হাসেম মিয়াজির ছেলে হানিফ মিয়াজি (৫৫), বাল্কহেডের বাবুর্চি একই উপজেলার সাঙ্গীভাঙ্গা এলাকার নবির হোসেন সরকারের ছেলে রাকিব হাসান (২০), বাল্কহেডের লস্কর শেখ সাদি বেপারীর ছেলে আবু হানিফ (২১)। 

এদিকে মামলার অপর দুই আসামি বাল্কহেডের মালিক চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার দক্ষিণ দশআনি গ্রামের তাইজুদ্দিন মিয়াজীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৩৮) ও সুকানী রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মহাজন পাড়া এলাকার শাহজালাছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।