কার্যকারিতা হারিয়েছে ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক

বিএসএমএমইউয়ের গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৭
শেয়ার :
কার্যকারিতা হারিয়েছে ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক

দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগই কার্যকারিতা হারিয়েছে, যার প্রথম ও প্রধান কারণ অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করা গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। দেড় বছরে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেওয়া ৭২ হাজার ৬৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় এমন ফল পাওয়া গেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলছেন গবেষকেরা।

আজ সোমবার ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অন্তত ৭৫ ভাগ ইনফেকশন হয় টাইফয়েড, ই কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা, সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকসেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে গেছে প্রায় ৯০ ভাগ। এ ছাড়া আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা চলত, তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে যাচ্ছে।

একইসঙ্গে যেসব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলত তা এখন কমিউনিটিতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণা প্রসঙ্গে ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ‘কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলোকে একেবারে শেষ ধাপ হিসেবে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোনো একান্ত বিপদে না পড়লে এই রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো একেবারেই হাত দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি অহরহ এ সব রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া উচিত, এগুলো এখন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেই আমরা ব্যবহার করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা রিজার্ভের যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো এখনই ব্যবহার করে ফেলছি, এরপরে কিন্তু আমাদের আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। সেই সময়ে কিন্তু আমাদেরকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে। তখন দেখা যাবে যে, অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণ সর্দি-জ্বরেরও কাজ করবে না। তখন কিন্তু সামান্য অসুখ বিসুখেই আমাদেরকে প্রাণ হারাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি জটিল রোগে মানুষকে সেবা দিতে এবং বিদেশমুখিতা ঠেকাতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা- নিরীক্ষা না করে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে করোনা থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের কারণে।’

হাসপাতালে দর্শনার্থীদের মাধ্যমে ও দর্শনার্থীরা রোগীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে জানিয়ে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে যাবেন রোগীকে দেখতে, একটু দূরে থেকে দেখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে দেখতে হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষও রোগী হয়ে যায়। এটাকে ক্রস ইনফেকশন বলে। এ জন্য হাসপাতালে আসলেও দ্রুত চলে যেতে হবে দর্শনার্থীদের।’

অনুষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত রোগীর নমুনায় সকল ধরনের জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশ করেন বেসিক সাইন্স ও প্যারা-ক্লিনিকাল সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় রোগীদের নমুনায় জীবাণু সনাক্তকরণ ও জীবাণু সমূহের এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা নির্ণয়ের বিএসএমএমইউতে থাকা প্রযুক্তিসমূহ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় এই বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন।