‘আমি যা বলেছি, কোনো ভুল বলিনি’
বিএনপি নেতাদের মুক্তি প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী
‘নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।’—নিজের দেওয়া এ বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমি যা বলেছি, কোনো ভুল বলিনি। বক্তব্য একদম ঠিক আছে। অনেক কথার মধ্যে বিষয়টি এসেছে।’
আজ সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনার আলোকে পরিচালিত হয়। আমরা সবসময় চেয়েছি এই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক। বহুবার আমি বলেছি বিএনপি অবশ্যই একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের নির্বাচনে আমরা আনতে চাই কিন্তু সংবিধানের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার কথা এসেন্সটাই (সারমর্ম) ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমরা সবসময় চেয়েছি, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিএনপি আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য হলো-এই যে আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে চেয়েছে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এটি বলতে গিয়ে সেদিন কিছু কথাবার্তা আমি চ্যানেল ২৪কে বলেছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে এটাও বলেছি, বিএনপি চায় নির্বাচন বানচাল হোক। তারেক রহমানের নামে মামলা রয়েছে, তার শাস্তি হয়েছে, সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তার মা (খালেদা জিয়া) অসুস্থ, তারও শাস্তি হয়েছে। তারা নির্বাচনে আসতে চায় না। আমাদের আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনোক্রমে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশন বারবার বলেছে বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপি যদি রাজি হয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এই কথাটিই আমি বলেছি। নির্বাচন কমিশনে তো আইনের লোক অনেক আছে। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা করে অনেক কিছুই করা যায়। খুনের আসামিরও তো জামিন হয়। প্রথমে না হলেও আস্তে আস্তে একসময় জামিন হয়। ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কি জেলে রেখে নির্বাচন হবে? সেটা একটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জামিনের ব্যবস্থা করা হতো। একটা ফর্মালিটিজ করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হতো।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হলে তারা হরতাল, অবরোধ অগ্নিসন্ত্রাস ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত হতো। তখন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জামিন পাওয়া সহজ হতো।
বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। যারা সন্ত্রাস করছে, সন্ত্রাসের হুকুম দিচ্ছে, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে, লন্ডনে বসে থেকে নির্দেশ দিচ্ছে, সরকার বাধ্য হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
মন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে বিএনপি রেললাইন কেটেছে! দেশে কি কোনো মুক্তিযুদ্ধ চলছে? দেশে কি যুদ্ধাবস্থা? এগুলো তো যুদ্ধের সময় করে। এগুলো বন্ধ করতে হলে মানুষকে তো গ্রেপ্তার করতে হবে। বিএনপি নেতাদের হুকুম ছাড়া কোনো কর্মী কি বাসে আগুন দেবে? তার জেল-জুলুমের ভয় আছে না? আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে এ বছর বিএনপির সহিংসতা অনেক কম। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা যেভাবে তাণ্ডব ও চার শ’র বেশি মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল, এবছর সেই পরিস্থিতি নেই।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ চেয়েছে আগামী নির্বাচনের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি একটি বড় দল এটা আমরা সবসময় বলি। কিন্তু বিএনপির সবসময় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নানা রকম ফন্দি করেছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে এসে বিএনপি বলতে পারত কীভাবে নির্বাচনটা সবার কাছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা যায়? সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থনও আমরা নিতে পারতাম, আরও বেশি পর্যবেক্ষক আসতো বিদেশ থেকে। এখন ওসিদের বদলি করছে, এভাবে এসপিদের বদলি করা যেত, ডিসিদের করা যেত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা যা করা দরকার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও এ সরকারকে রেখে সেটা আওয়ামী লীগ সবসময় করতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেটা বিশ্বাস করে না। তারা গেছে আন্দোলনে।’