সমঝোতার ৩২ আসনে কাটেনি স্বতন্ত্র-শঙ্কা
ভোটে বৈধ প্রার্থী ১৮৯৬
অবশেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি ও ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এসব আসনে দলের যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি দলটি। আওয়ামী লীগ বলছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে জাপা ও শরিক দলগুলোর নেতাদের আপত্তি রয়েই গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া
৩২ আসনের বাইরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপা ও শরিক দলগুলো। এতে আওয়ামী লীগ কোনো
আপত্তি জানায়নি।
এদিকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৮৯৬। রবিবার রাতে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিল করেন দুই হাজার ৭১৬ প্রার্থী। বাছাইয়ে বাতিল হন ৭৩১ জন, আপিল দায়ের করেন ৫৬০ জন। আপিল মঞ্জুর
হয় ২৮৬ জনের ও আপিল নামঞ্জুর হয় ২৭৪ জনের।
তিনি আরও বলেন, রবিবার সারাদেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৭টি, স্থগিত আছে পাঁচটি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ২৭টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে এখন মোট বৈধ প্রার্থী এক হাজার ৮৯৬ জন।
অন্যদিকে ‘অভিমান’ থাকলেও ১৪ দলে থাকার কথা জানিয়েছেন শরিকরা। ১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারি দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, শেখ হাসিনার কাছে আসন পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু না পেলেও শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রয়েছে।
নজিবুল বশর জানান, নৌকা না পেলেও দলের ফুলের মালা প্রতীকে ৪২টি আসনে তরিকত ফেডারেশন নির্বাচন করবে। গণ-আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসকে শিকদার জানান, শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা থেকে তারা জোটে আছেন এবং থাকবেন।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
দুটি শরিক দলের নেতা চাপা অভিমান প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্য, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেপি আসন পেলে তারা কেন পাবেন নাÑ এ বিষয়টি বলারও সুযোগ তারা পাননি।
এদিকে আসন পেয়েও স্বস্তিতে নেই ১৪ দলের তিন শরিক দলের নেতারা। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা আদৌ জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে কিনা, এ নিয়েও শঙ্কা আছে শরিকদের।
জাসদের এক নেতা বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখে সমঝোতা মানে রসিকতা করা। আশা করি, আওয়ামী লীগ যেকোনো কৌশলে এর সমাধান করবে।’
স্বতন্ত্র সরানোর অনুরোধ জাপা নেতাদেরও। দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান জানান, স্বতন্ত্র না সরালে ভোটের মাঝপথে জটিলতার শঙ্কা থেকে যাবে।
নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করেছি। জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩২টি আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।’
ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবেন কিনা জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছিলাম। সে ক্ষত্রে অন্য কোনো দল বা প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আমাদের নেই।’
এবারের নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। ইসির যাচাই-বাছাইয়ে পর পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। জাতীয় পার্টি ও শরিকদের ৩২টি আসন ছেড়ে দেওয়ার পর ২৬১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। এবার ভোটে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ১৮৯৬ জন।
ভাগ্যবান শেরিফা কাদের
স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন দিয়ে দলে তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এর আগে শেরিফা কাদেরকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা করা হয়, পরবর্তীতে হন প্রেসিডিয়াম মেম্বার। এছাড়া তিনি লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও দলের সহযোগী সংগঠন সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে এমপিও হন শেরিফা কাদের। জি এম কাদেরের স্ত্রী হওয়ায় তার এমন জয় জয়কারÑ এমন কথা ফেসবুকে লিখেছেন অনেকে।
বঞ্চিত রশিদ, বাবলা, সালমা
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার হিসাবে বাদ পড়েছেন জাপার অন্তত তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেনÑ দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, দলের কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি সালমা ইসলাম এবং দলের কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাপার সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
এদিকে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তার প্রতিনিধি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মীরসরাই আসনে আমি জোট থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার পক্ষে প্রত্যাহার করেছি।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘কোনো চাপে নির্বাচন করছি না। আমরা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করব। আমরা ২৮৩ আসনে নির্বাচন করব। এসব আসনে কোন দলের কোন প্রার্থী আছেন, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
আজ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করবেন রিটানিং কর্মকর্তা। দলীয় প্রার্থীরা নিজ দলের প্রতীক পাবেন। একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী একই প্রতীক চাইলে লটারি হবে। প্রতীক পেয়েই প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা।
কপাল পুড়ল নৌকার যেসব প্রার্থীর
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদের জন্য সরে দাঁড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী ইমদাদুল হক; নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেলের জন্য গোলাম মোস্তফা, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমানের জন্য জাকির হোসেন বাবুল, রংপুর-১ আসনে হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের জন্য রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদেরের জন্য তুষার কান্তি ম-ল এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে মুস্তাফিজুর রহমানের জন্য আছলাম হোসেন সওদাগর সরে দাঁড়াচ্ছেন। কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদের জন্য জাফর আলী, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জন্য আফরুজা বারী, গাইবান্ধা-২ আসনে আবদুর রশিদ সরকারের জন্য মাহবুব আরা বেগম গিনি, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর জন্য তৌহিদুর রহমান মানিক, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদারের জন্য সিরাজুল ইসলাম খান রাজু এবং সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আশরাফুজ্জামানের জন্য আসাদুজ্জামান বাবুকে সরে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পটুয়াখালী-১ আসনে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের জন্য মো. আফজাল হোসেনকে, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপুর জন্য সরদার মো. খালেদ হোসেনকে, পিরোজপুর-৩ মাশরেকুল আজম রবির জন্য আশরাফুর রহমানকে, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তির জন্য আবদুল হাই আকন্দকে, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমামের জন্য আবদুছ ছাত্তারকে, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মো. মুজিবুল হক চুন্নুর জন্য নাসিরুল ইসলাম খানকে, মানিকগঞ্জ-১ আসনে জহিরুল আলম রুবেলের জন্য আবদুল সালামকে, ঢাকা-১৮ আসনে শেরিফা কাদেরের জন্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানকে, হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. আবদুল মুনিম চৌধুরীর জন্য ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরীকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আবদুল হামিদের জন্য শাহজাহান আলমকে, ফেনী-৩ আসনে লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর জন্য মো. আবুল বাশারকে, চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জন্য মোহাম্মদ আবদুস সালামকে, চট্টগ্রাম-৮ আসনে সোলায়মান আলম শেঠ-এর জন্য নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এখানে নির্বাচন করবেন জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান।
১৪ দলীয় জোটের জন্য সরে দাঁড়ানো নৌকার ছয় প্রার্থী হলেনÑ বরিশাল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের জন্য তালুকদার মো. ইউনুস, রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশার জন্য মোহাম্মদ আলীকে প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এ আসনে আগে থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন দলটি। এ ছাড়া বগুড়া-৪ আসনে জাসদের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনের জন্য নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশাররফ হোসেনের জন্য ফরিদুন্নাহার লাইলীকে প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। পিরোজপুর-২ আসনেেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রত্যাহার করেছে দলটি।