ঢাকাই সিনেমার স্বপ্নের নায়িকা

জাহিদ ভূঁইয়া
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
ঢাকাই সিনেমার স্বপ্নের নায়িকা

যে সুন্দর দেখে সবাই মুগ্ধ হয়, সেই সুন্দরের সব কিছুই দখলে তার। সেলুলয়েডে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে মন জয় করেছেন কোটি ভক্তের। দীর্ঘদিন পর্দা কাঁপিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের রূপের ঝলকানিতে প্রেমের ঝড়োহাওয়া তৈরি করেছেন চলচ্চিত্রের অনেকের মনে। অনেক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে সুন্দরকে করেছেন অপরূপ সুন্দর। তিনি ঢাকাই সিনেমার স্বপ্নের নায়িকা শাবনূর। আজ এই অনিন্দ্যসুন্দরের জন্মদিন। আমাদের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা। ১৯৭৯ সালের আজকের দিনে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। ছোটবেলায় সবাই ডাকতেন নূপুর বলে। সিনেমায় নাম লেখানোর পর স্বনামধন্য নির্মাতা এহতেশাম নাম রাখেন শাবনূর। এই নামের অর্থ রাতের আলো। সিনেমাজগতে এই নাম আলো ছড়িয়েছে অনেকবার।

শাবানা-ববিতার পর তাকেই ‘অভিনেত্রী’র খেতাব দিয়েছেন অনেক গুণীজন। ক্যারিয়ারে তিনিই সবচেয়ে বেশি হিট ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। আবার একাধিক নায়কের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো জুটিও তার। সালমান শাহ থেকে শুরু করে রিয়াজ, ফেরদৌস কিংবা শাকিব খানÑ সবার সঙ্গেই ফিট শাবনূর। তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার। এমন সফল একজন নায়িকা ক্যারিয়ারের শুরুতেই হতাশ হয়েছিলেন। অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে শাবনূর নিজেই এ কথা বলেছেন। ১৯৯৩ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাত’ ছবি দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। ছবিটি ফ্লপ হয়। শাবনূর বলেন, “আমার প্রথম ছবি ফ্লপ হওয়ায় খুব ভেঙে পড়েছিলাম। ছবি আর করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন দাদু (এহতেশাম) আমাকে উৎসাহ দিলেন। আমার বাবা-মাও বললেন, প্রথমটা খারাপ গেছে তাতে কী হয়েছে। পরবর্তী যে ছবিগুলো তুমি সাইন করেছ, সেগুলো রিলিজ হোক, দেখো। তার পর ‘দুনিয়ার বাদশাহ’ রিলিজ হলো। মোটামুটি হিট হলে উৎসাহ বাড়ল। এর পর ‘তুমি আমার’ ও ‘সুজন সখী’সহ আরও বেশকিছু সিনেমা মুক্তি পেল। এগুলো সুপারহিট। তার পরই অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

শাবনূরের অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, তারপরের ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলেই সেটা বোঝা যায়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবি। এ বছরের ১৫ অক্টোবর ক্যারিয়ারে পথচলার তিন দশক পূর্ণ করেছেন। শাবনূর বলেন, ‘প্রবল দর্শকচাহিদার জন্য প্রযোজক-পরিচালকেরা আমাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণে অত্যন্ত আগ্রহী হন। তাই তো ১৫৮টি ছবির বিশাল মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি ছবিই আমার কাছে ভীষণ প্রিয়।’ বর্তমানে শাবনূর আর সিনেমার শুটিং করেন না। শুটিংয়ের জন্য যেতে হয় না দেশের নানা জায়গায়। চলচ্চিত্রের ঘরোয়া অনুষ্ঠান ছাড়া জনসমক্ষে খুব একটা আসেন না তিনি। একমাত্র সন্তান আইজানকে নিয়ে যান চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কিন্তু ভক্ত-দর্শক তাকে ভোলেনি। শাবনূর বলেন, ‘দেশের মানুষ ভালোবেসে আমাকে শাবনূর বানিয়েছেন। এই ভালোবাসা সব সময় অনুভব করি। সবার প্রতি আমার ভালোবাসা রইল। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

জনপ্রিয় ৫ সিনেমা

তোমাকে চাই (১৯৯৪) : মতিন রহমান পরিচালিত এ ছবিটিতে সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। ছবিতে দারুণ কিছু আবেগী মুহূর্ত রয়েছে, সঙ্গে অসাধারণ কিছু গান।

স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) : সালমান শাহ-শাবনূর জুটির অন্যতম সফল ছবি এটি। এমএ খালেক অতি প্রচলিত ধনী-গরিব ফর্মুলায় সিনেমাটি নির্মাণ করেন। কিন্তু টানটান চিত্রনাট্য, গান ও অভিনয়ের কারণে এটি ক্ল্যাসিক হয়ে গেছে।

বিয়ের ফুল (১৯৯৮) : মতিন রহমান পরিচালিত এ ছবিটি হিন্দি ‘দিওয়ানা’র অফিসিয়াল রিমেক। শাবনূরের অভিনয় ও গানই এ সিনেমার প্রাণ। ছবির ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। শাবনূরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও শাকিল খান।

শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ (২০০১) : কমেডি, রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমাটি শাবনূরকে দিয়েছিল অন্যরকম জনপ্রিয়তা।

এর পরিচালক ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। রিয়াজের বিপরীতে শাবনূরের এই সিনেমাটি দারুণ ব্যবসাসফল।

দুই নয়নের আলো (২০০৬) : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন তিন নায়কÑ ফেরদৌস, শাকিল খান ও রিয়াজ। কিন্তু শাবনূরের দাপটে কারও কিছু করারই ছিল না। এটি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।