রাঙামাটি-আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়ক পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা

বিহারি চাকমা, রাঙামাটি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
রাঙামাটি-আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়ক পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা

পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের ওপর নির্মাণ করা গার্ডার সেতুগুলো প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে সাজিয়েছে। সাজানো সড়ক-ব্রিজ ও প্রকৃতি যেন সারাক্ষণ হাতছানি দিয়ে ডাকে পর্যটকদের। রাঙামাটি-আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়ক এখন রাঙামাটিতে পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ। সড়কটির আশপাশে রয়েছে সবুজ প্রকৃতি, হ্রদ, পাহাড় ও পাহাড়িদের শান্ত নিবিড় জনবসতি। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটির পুরোটাতেই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়ানো।

সড়কের পাশে রয়েছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে সাধনানন্দ মহাথেরোর (বনভান্তে) স্মৃতি মন্দির, বড়গাং রেস্টুরেন্ট, বেড়ান্যা রেস্টুরেন্ট, ইজোর রেস্টুরেন্ট, বড়াদাম বাজার ও বাজারসংলগ্ন সংযোগ সেতু। পর্যটকদের পাশাপাশি এলাকার লোকজনও বেশ আরামে ও আনন্দের সঙ্গে ঘোরাফেরা করেন সড়কটিতে। পূর্ব পাশে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ শীতল নীল জলরাশি এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে ছোট ছোট ছড়াছড়ির গতিপথ। চারদিকে পাহাড়- হ্রদের মিতালি।

পর্যটন সম্ভাবনার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের যোগাযোগের সুবিধা নিশ্চিত করতে সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, এ বছর আসাম বস্তি-কাপ্তাই সড়ক প্রকল্পটির জন্য বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ লাভ করেছি আমরা। সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট সাবক্যাটাগরি অংশে ৪৪টি প্রকল্পের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তিনি জানান, সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা ভাঙন রোডে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। এর একটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার, আরেকটির দৈর্ঘ্য ৯৬ মিটার এবং অন্যটির দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। এই ৩টি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটির বেশি টাকা। পর্যায়ক্রমে সড়কের পাশে পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা ও গণশৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সড়কের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণকাজ বেশ চমৎকার সুন্দর টেকসই হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। সড়ক উন্নয়নের ফলে স্থানীয় মানুষের টাকা-পয়সা আয়-রোজগারের পথ সুগম হয়েছে। বড়াদাম বাজারের প্রধান সড়কের পাশে দোকান দেন ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রমা দেবী চাকমা। পাকা কলা, ডাব, বেল, লেবু, নারিকেল প্রভৃতি ফল বিক্রি করেন নিজের চা দোকানের সামনে। তিনি বলেন, পর্যটক বেড়াতে এলে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রি হয় আমার এই দোকানে। নারীরা নিজেদের ক্ষেতে উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল বিক্রি করে টাকা রোজগার করতে পারছে। এটা বেশ ভালো লাগে।

রাঙামাটি পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক অলক বিকাশ চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে এখন বিপুলসংখ্যক পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। রাঙামাটি-আসাম বস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়কসহ দৃষ্টিনন্দন ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে তারা ঘোরাফেরা করছেন।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কনসালট্যান্ট (গভর্ন্যান্স) অরুনেন্দু ত্রিপুরা বলেন, এই সড়কের কাজটি বেশ ভালো হয়েছে। কাপ্তাই-রাঙামাটি সংযোগ সড়কসংলগ্ন পুরো এলাকাটির মতো অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পার্বত্য চট্টগ্রামের আর কোথাও নেই। হ্রদ, পাহাড়, জনবসতি, মনোমুগ্ধকর সবুজ প্রকৃতির এমন অপরূপ রূপ সত্যিই অসাধারণ। পুরো এলাকাটিকে পর্যটন জোন ঘোষণা করে এখানে ইকো-ট্যুরিজম করা হলে স্থানীয়রা অর্থনৈতিকভাবে খুবই লাভবান হবে।