ইনুর চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কামারুল
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এই আসনে ১৪-দলীয় জোট থেকে তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। কারণ মিরপুর ও ভেড়ামারাÑ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনকে। তিনি মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে এবার প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমানে মিরপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন কামারুল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে নাÑ দলীয় সভাপতির এমন বক্তব্যের পর মিরপুর-ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইনুবিরোধী প্রচার জোর পায়। তারা ইনুকে বসন্তের কোকিল আখ্যা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের পক্ষে একজোট হয়েছেন।
এবার সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য গত ২১ নভেম্বর মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং ৩০ নভেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ।
মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে হবে। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে নাÑ এ ঘোষণার পর আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে জনতার কাতারে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
হাসানুল হক ইনুকে উদ্দেশ করে কামারুল আরেফিন বলেন, ওনাকে এবার ২০ শতাংশ ভোট নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। উনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। জাসদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মিরপুর-ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ভোটের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে নির্বাচিত হয়েই তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চালিয়েছেন নির্মম নির্যাতন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাই তাকে আর এমপি হিসেবে দেখতে চায় না। দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা আমাকে নির্বাচিত করার জন্য অপেক্ষা করছেন। এমনকি দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ভোট পাব। তাই আমি জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
গত তিনটি নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে টানা এমপি নির্বাচিত হন হাসানুল হক ইনু। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তিনি তথ্যমন্ত্রী হন। পরপর তিনটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায়
এমপি হন ইনু। বিগত তিনটি নির্বাচনে সহজেই বৈতরণী পার হলেও এবার ইনুর জন্য বিপাকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ কামারুল আরেফিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। বিএনপি-জামায়াত না আসায় এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ইনুকে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেন, নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে কামারুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি পরপর দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। মিরপুর ও ভেড়ামারা কামারুলের ভোটব্যাংক। তা ছাড়া এবার ‘ইনুর অহঙ্কার’ ভাঙার জন্য বিএনপি-জামায়াতও একাট্টা বলে জানা গেছে।
এই সব বিষয়ে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য জানতে চেয়ে তার মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মিরপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জোয়ার্দার বলেন, জাসদের প্রতি নানা ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের ভোটে ইনু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি সম্পর্ক রাখেন না আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
আবুল কাশেমের অভিযোগ, নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেননি ইনু। উল্টো আওয়ামী লীগের চার নেতাকে হত্যা করেছে জাসদের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া হামলা-মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করেছে জাসদ। এসব নিয়ে কর্মীদের মনে কষ্ট ও ক্ষোভ এবং হতাশা রয়েছে। তাই এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইনুর পক্ষে ভাড়া খাটবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আমরা কামারুল আরেফিনের নির্বাচন করব।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী