অনিশ্চয়তায় শিরীন নাসিম নির্ভার

মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ফেনী
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
অনিশ্চয়তায় শিরীন নাসিম নির্ভার

সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়াম লীগ ও তাদের জোটসঙ্গী দলগুলো। জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী পরশুরাম উপজেলা)। এ আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একই আসনে সর্বশেষ দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। আর এবার মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ইতোমধ্যে ১৪ দল থেকে যে তিনটি আসন জোটঙ্গীদের দেওয়া হয়েছে সেখানে ফেনী-১ আসনে জাসদের হেভিওয়েট প্রার্থী শিরীন আখতারের নাম নেই। যার ফলে আলাউদ্দিন নাসিম এখন অনেকটাই নির্ভার। আর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিরীন আখতার। সর্বশেষ (শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত) ১৪ দল থেকে আসন পেতে লড়ছিলেন শিরীন আখতার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই আছেন।

এ ব্যাপারে শিরীন আখতার বলেন, ‘এখনো অনিশ্চিত না। নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা হবে।’ ‘১৪ দল থেকে আসন না পেলে নির্বাচন করবেন কিনা?’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটির জন্য আগামীকাল (আজ ১৭ ডিসেম্বর) অপেক্ষা করতে হবে।’

সর্বশেষ ১৪ দলের আসন ভাগাভাগিতে শিরীন আখতারকে ছাড় না দেওয়ায় নাসিম ও তার সমর্থকরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। ততে হতাশ শিরীনের সমর্থকরা। নাসিম নির্বাচনী তৎপরতার মধ্যে আছেন। আর শিরীন এখনো ১৪ দল থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে প্রার্থী আলাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে মাঠে কাজ করতে বলছেন, আমি করছি। আমি নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। যেহেতু ১৪ দল আছে, দলের সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্ত। এখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো। ১৪ দলের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে।

ভোটের মাঠ ঘুরে সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনে জেতার মতো সক্ষমতা এখনো ফেনী-১ আসনে গড়ে ওঠেনি জাসদের। এ আসনে এখনো বিএনপির ভোটার ও সমর্থক বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে আওয়ামী লীগ। বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগ উজ্জীবিত।

আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের বাইরে যাদের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে, সেসব প্রার্থীর গণভিত্তি তেমন নেই। প্রার্থীরাা হলেন- জাকের পার্টির রহিম উল্যাহ ভূইয়া, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কাজী মো. নুরুল আলম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মাহবুব মোর্শেদ মজুমদার, তৃণমূল বিএনপির মো. শাহজাহান সাজু, স্বতন্ত্র (নাসিমের ডামি) আবুল হাশেম ও জাতীয় পার্টির শাহরিয়ার ইকবাল পাটোয়ারী। এ আসনে অনেক প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ থাকলেও অক্টোবরের শেষের দিক থেকে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম মাঠে সক্রিয়। তিনি একসময় আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অঘোষিত ‘অভিভাবক’। জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও নিয়ন্ত্রক ছিলেন নাসিম। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় জাসদের জনসমর্থন না থাকলেও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে শিরীন আখতার নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে মানতে নারাজ। নাসিম মাঠে নামায় তিন উপজেলার আওয়ামী লীগও এখন একাট্টা। সবাই নাসিমের জন্য কাজ করছেন। ১৯৭৩ সালে সাংবাদিক এবিএম মূসার পর ফেনী-১ আসনে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি পায়নি। ৯০ দশকে এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে টানা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সক্ষমতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মজবুত বলে দাবি দলটির নেতাকর্মীদের। ফেনী-১ আসন নব্বই দশকের পর থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসন বলে পরিচিত। এখানে তার পৈতৃক বাড়ি। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সেই থেকে টানা পাঁচবার খালেদা জিয়া এ আসনে জেতেন।