দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি থাকলে মুক্তি আসবে না: মোহা. নূর আলী
বিজয় দিবসের আলোচনা সভা
দেশে যতদিন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থাকবে, ততদিন মুক্তি আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও গুলশান জগার্স সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশান সোসাইটি প্রাঙ্গণে গুলশান জগার্স সোসাইটি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মোহা. নূর আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মুক্তির কথা বলেছেন। আমি মনে করি এখনো আমাদের মুক্তি হয়নি। আমাদের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, মুক্তির যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। যতদিন এ দেশে দুর্নীতি থাকবে, যতদিন এ দেশে স্বজনপ্রীতি থাকবে, ততদিন আমাদের মুক্তি হবে না।’
বঙ্গবন্ধুর চারটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, আজকে ৫২ বছর পার হলো—এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র কেউ মানে, কেউ মানে না, গণতন্ত্র এখনো পনিষ্কার না। তিনি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন, জাতীয়তাবাদ এখনো অস্পষ্ট, শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য। শিক্ষাকে নানাভাবে বিভাজন করে রাখা হয়েছে, এটা জাতীয়তাবাদের লক্ষণ নয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছি, আসলে আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ বলা যায় না। আমরা সমাজতন্ত্রের কথা বলেছি, প্রশ্নই আসে না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাড়ে সাত কোটি মানুষকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, আমরা যদি সেইভাবে ১৭ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ গড়ার কাজসহ প্রত্যেকটি কাজে সম্পৃক্ত করতে পারতাম, তাহলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংগ্রাম সফল হতো।’
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, ‘বাঙালি জাতির কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাস এই বিজয়। আমরা এই বিজয়কে ধারণ করব। বিজয়ের ৫২ বছরে বাংলাদেশ সম্মানের জায়গায় এসেছে এবং দেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধ জায়গায় এসেছে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ‘এই বৃহত্তর অর্জনের যে শক্তি তা জাতির শক্তি, সংস্কৃতির শক্তি, এটাই আমাদের মূল অবলম্বন, এর ওপর ভিত্তি করেই আমরা বিজয় অর্জন করেছি।’
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা স্লোগান—এগুলো সব মানুষের সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সিকদার বলেন, ‘রাজনীতি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা, কিন্তু এই যে সম্পদ তা সবার, সমস্ত মানুষের। এই বিষয়টি আজকের এই দিনে আমাদের উপলব্ধি আসা দরকার।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রতিটি দিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং এর স্মৃতি অম্লান উল্লেখ করে সভায় আমাদের সময়ের উপদেষ্টা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আমরা সব মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে সীমান্ত থেকে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে আস্তে আস্তে ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। সেই সুবাধে বিজয়ের ২-৩ দিন আগে আমরা ঢাকার আশপাশে জড়ো হলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যদি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে রাত ১২টার পরই চারদিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করবে।’
কখনো কখনো বিজয়ের দিন বা স্বাধীনতা দিবসে আনন্দের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যথিতও হয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমরা যারা অংশ নিয়েছি, তারা ব্যথিত হই এই নিয়ে যে, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেগুলো স্বীকৃত, যেগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, রাজনৈতিক প্রয়োজনে আমরা সেগুলো নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক করি।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে হবে উল্লেখ করে সাবেক সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাঙালি, বাঙালিত্ব, সমাজে সাম্যের যে অঙ্গীকার ছিল, ধর্মনিরপেক্ষতা, সবাই মিলে সোনার বাংলায় বাস করব, আজকে নানা কারণে যদি ঘাটতি হয় তাহলে বলব মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি আমরা প্রকৃত সম্মান জানাতে পারছি না।’ এ সময় সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও মূল্যবোধ ধারণ করার আহ্বান জানান তিনি।
গুলশান জগার্স সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, গুলশান জগার্স সোসাইটির উপদেষ্টা এম আমান উল্লাহ। সোসাইটির সহসভাপতি ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এম এ কামাল।
গুলশান জগার্স সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা মোহা. নূর আলীর মেজ মেয়ে নাদিহা আলী গত ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। অনুষ্ঠানে নাদিহা আলীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নিহতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করে জগার্স সোসাইটি।