সিনেমার পর্দায় মহান মুক্তিযুদ্ধ

বিনোদন প্রতিবেদক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮
শেয়ার :
সিনেমার পর্দায় মহান মুক্তিযুদ্ধ

ডিসেম্বর মানেই বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের আজকের এদিনে (১৬ ডিসেম্বর) স্বাধীনতা পেয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্যাপকভাবে গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করেছে। শত অত্যাচার, নিপীড়ন করেও দমানো যায়নি মুক্তিকামী বাঙালিকে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারা ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। বাংলাদেশের এই ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে ধরা দিয়েছে সেলুলয়েডের পর্দায়। নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা। বিজয় দিবসের আজকের আয়োজনে তেমনই কিছু সিনেমার কথা তুলে ধরা হলো- 

ওরা ১১ জন

মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’। প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয় এটি। এই সিনেমার বিশেষত্ব হলো, এতে প্রধান ১১ জন অভিনেতার ১০ জনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু। এতে আরও অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান ও খলিলউল্লাহ খান প্রমুখ। সিনেমাটি ১৯৭২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এর প্রযোজক ছিলেন অভিনেতা মাসুদ পারভেজ, যিনি সবার কাছে সোহেল রানা নামে পরিচিত।

আবার তোরা মানুষ হ

যুদ্ধ পরবর্তী একটি দেশের সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমায়। যুদ্ধে অংশ নেওয়া একদল তরুণ কলেজছাত্র যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশ থেকে অন্যায় ও অপকর্ম নির্মূলের লড়াই অব্যাহত রাখে। ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত পরিচালক প্রয়াত খান আতাউর রহমান। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফারুক, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, চিত্রনায়িকা ববিতা, অভিনেত্রী রোজী আফসারী ও রওশন জামিলসহ অনেকে।

গেরিলা

নাসির উদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘গেরিলা’। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।

আগুনের পরশমণি

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই এটি নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর প্রমুখ। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আগুণের পরশমণি’ বেশ কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। সিনেমাটি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পটভূমির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারি কর্মকর্তা মতিন সাহেবের অবরুদ্ধে পরিবারে বদি নামের একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নেন। আশ্রয় নেওয়ার পর যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়ে যেতে থাকে।

সংগ্রাম

এই সিনেমাটিও নির্মাণ করেছেন চাষী নজরুল ইসলাম। ‘সংগ্রাম’ মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। এর গল্প নেওয়া হয়েছে সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের ডায়েরি থেকে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন সুচন্দা, খসরু। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি সিনেমা এটি।

হাঙর নদী গ্রেনেড

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের প্রকাশিত উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে সিনেমাটি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। যশোরের এক মায়ের আত্মত্যাগের সত্য ঘটনা অবলম্বনে উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল। একজন মা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার নিজের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিসর্জন দেন। সিনেমাটিতে মায়ের ভূমিকায় অভিনেত্রী সুচরিতা অনবদ্য অভিনয় করেন এবং চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের মতে, এটাই সুচরিতার জীবনের সেরা ছবি। সিনেমাটিতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল রানা, শর্মিলী আহমেদ, দোদুল, অন্তরা ও মিজু আহমেদ। 

শ্যামল ছায়া

সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি হলেও এতে সরাসরি যুদ্ধ না দেখিয়েও যুদ্ধের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশে যখন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকে। তাদের গল্প নিয়েই এগিয়েছে সিনেমার গল্প। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শ্যামল ছায়া’ নির্মাণ করেছেন প্রয়াত সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। এতে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরিদী, মেহের আফরোজ শাওন, শিমুল, দিয়াজ, স্বাধীন খসরু, সৈয়দ আখতার আলী, ফারুক আহমেদ, শায়েস্তা নাজনীনসহ আরও অনেকে।

আমার বন্ধু রাশেদ

২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। মুহম্মদ জাফর ইকবাল’র শিশুতোষ উপন্যাস থেকে এটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। অভিনয় করেছেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান। আরও কাজ করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি। এছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত কাওসার আবেদীন।

মেঘের অনেক রং

এই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ১৯৭৬ সালে। হারুনর রশীদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ সিনেমায় যুদ্ধের সময় রুমা নামের একজন ডাক্তারের স্ত্রী ধর্ষণের পর সন্তানসহ কীভাবে কষ্টের শিকার হয় সে চিত্র উঠে এসেছে। রত্না কথাচিত্রের ব্যানারে সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন আনোয়ার আশরাফ ও শাজীদা শামীম। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাথিন, ওমর এলাহী, রওশন আরা, আদনানসহ অনেকে। ‘মেঘের অনেক রং’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় রঙিন এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙিন সিনেমা।

জয়যাত্রা

অভিনেতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। প্রয়াত বিখ্যাত কাহিনীকার ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের গল্পে এটি নির্মিত। জয়যাত্রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী।