দোহার-নবাবগঞ্জের পথে পথে লাল সবুজের ফেরিওয়ালা
মোহাম্মদ হোসাইন (১৫) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার হরেকৃষ্ণ কুসুমকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ৬ জনের পরিবারে ৪ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় হোসাইন। যদিও আসল বাড়ি রাজশাহী জেলায়। উপজেলার মাধবপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকে তারা। অভাবের সংসার তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করে হোসাইন।
চলছে বিজয়ের মাস। পরীক্ষার পর স্কুল বন্ধ থাকায় সংসারের অভাব মেটাতে বাঁশের সঙ্গে লাল সবুজের পতাকা বেঁধে নবাবগঞ্জের অলিতে গলিতে পতাকা বিক্রি করছে হোসাইন।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় মানুষের ভির থাকায় এ এলাকায় পতাকা বিক্রি বেশি। সে জানায় তার বড় ভাইও পতাকা বিক্রি করেন।
বিজয়ের মাস ঘিরে বাঙালিদের আনন্দের কমতি নেই। বাঙালি জাতির জন্য গৌরবান্বিত ও মর্যাদার মাস এটি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়। দেখতে দেখতে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৫২ বছরে পা রাখল লাল-সবুজ খচিত স্বাধীন বাংলাদেশ।
বিজয়ের মাস শুরু হলেই দোহার-নবাবগঞ্জে লাল-সবুজের পতাকা শোভা পায় বাড়ির ছাদ, বাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা, রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলে।
হোসাইনের মতো ভ্রাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতাদের কল্যাণে এখন আর পতাকা বানাতে দর্জিদের কাছে যেতে হয় না। হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকা। বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এলেই পতাকা নিয়ে লম্বা লাঠিতে পতাকা বেঁধে ঘুরে বেড়ান তারা।
দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা যায় হোসাইনের মতো প্রায় ২০ জন ভাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতা রয়েছে। তাদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা যায় তারা কেউই এখানকার স্থানীয় নয়। বিভিন্ন জেলা বা এলাকা থেকে এসেছেন তারা।
মানিকগঞ্জ থেকে আসা সোলাইমান জানান, মানিকগঞ্জের চেয়ে দোহার ও নবাবগঞ্জে পতাকা বেশি বিক্রি হয়। মনে হয় এখানকার মানুষ পতাকাকে বেশি ভালোবাসে।
শাহাবাগ থেকে আসা রাসেল বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় পতাকা নিয়ে আসি। বিশ্বকাপ খেলায়ও আমি পতাকা বিক্রি করেছি। আমি বিজয়ের মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানে পতাকা বিক্রি করছি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে পতাকা বিক্রি করব।’
ফরিদপুর থেকে আসা হারুন বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করি। পতাকা নিয়ে প্রতিটি স্কুলের সামনে যাই। শিশুদের দেখলে তাদের সামনে বেশি যাই। ঘুরনির মতো পতাকা তাদের বেশি পছন্দ।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার পতাকা বিক্রি করি। ১৬ ডিসেম্বর যতই ঘনিয়ে আসছে বিক্রিও তত বাড়ছে।
ভ্রাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতাদের সূত্রে জানা যায়, এখন আর কাগজের পতাকা তেমন চলে না। তাই কাপড়ের পতাকার চাহিদা বেশি। তাদের কাছে আকার আকৃতি অনুযায়ী ১০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পতাকা পাওয়া যায়।
তবে পতাকা ক্রেতা নয়ন অভিযোগ করে বলেন, ভ্রাম্যমাণদের কাছে যে সকল পতাকা পাওয়া যায় তা খুবই নিন্মমানের। কয়েকদিন পরেই পতাকার প্রিন্ট উঠে যায়। তবে তাদের কাছ থেকে লাল-সবুজের বিভিন্ন পতাকা পাওয়া যায় বলে আমরা বেশ খুশি।