শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে নগদ আদায় নাজুক
শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। গত এক বছরে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ব্যাংক দুটি নগদ আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ। এর মধ্যে বিকেবি ১ কোটি টাকার ঋণও আদায় করতে পারেনি। একই সময়ে অবলোপন করা খেলাপি ঋণ থেকে ব্যাংক দুটির আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়। যদিও একই সময়ে ছোট ঋণখেলাপি থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তার পরও সার্বিকভাবে ব্যাংক দুটির খেলাপি ঋণ কমেনি। উল্টো একটির বেড়েছে, আরেকটির অপরিবর্তিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক দুটির স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় তৈরি জুনভিত্তিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ব্যাংক দুটির সঙ্গে বৈঠক করে শীর্ষ খেলাপি থেকে ঋণ আদায় জোরদার ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ব্যাংক দুটির পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রতিবছর সমঝোতা স্মারকের আওতায় বিভিন্ন আর্থিক সূচকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বরাবরই সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ব্যাংক দুটি। সূত্রগুলো বলছে, ব্যাংক দুটির শীর্ষ ঋণখেলাপি যারা, তাদের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। ফলে ঋণ আদায়ে তেমন সাফল্য আসছে না। এ বিষয়ে
বিকেবির চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, বিকেবি একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। একটা পর্যায়ে কৃষির বাইরেও কিছু ঋণ দিয়েছিল। হয়তো সে সময়কার ম্যানেজমেন্ট মনে করেছিল, এ রকম ঋণ দিলে ভালো হবে। সেই ঋণগুলোই পরবর্তী সময়ে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই ঋণগুলোই শীর্ষ ২০-এর মধ্যে আছে। আমরা এই ঋণ আদায়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। একজন শীর্ষ খেলাপিকে তিন মাস জেলও খাটিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। ব্যাংকটির সার্বিক খেলাপি ঋণ নিয়ে এক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কৃষকদের নিয়ে কারবার করতে হয়। অন্য ব্যাংক একজনকে যেখানে ১০ কোটি টাকা দিতে পারে। আর আমাদের ১০ কোটি টাকা ১০০ বা ২০০ জন কৃষককে দিতে হয়। কারণ আমাদের ছোট ছোট ঋণ, ৫ লাখ, ১০ লাখ বা ৫০ লাখ এ রকম। এই ঋণগুলো তদারকির জন্য যে জনবল থাকা দরকার, সেটি এতদিন আমাদের ছিল না। তবে কিছুদিন আগে সাড়ে ৪শর মতো লোকবল নিয়োগ হয়েছে। এখন জনবল বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে আমরা নগদ আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত বিকেবিকে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ১২০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০.২৬ কোটি টাকা আদায় করে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের পরিস্থিতি ভালো। গত অর্থবছর ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর ব্যাংকটি আদায় করেছে ৫০১.১৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের জুন শেষে অন্য ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।
অপরদিকে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ে নাজুক পরিস্থিতি রাকাবের। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছর রাকাবের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ০.৭৯ কোটি টাকা আদায় করে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ২৭৯ কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিরও অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের পরিস্থিতি ভালো। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির অন্য ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। আদায় করেছে ৪৪২.৫৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের জুন শেষে অন্য ঋণখেলাপির কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এদিকে খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট-অফ থেকেও অর্থ আদায়ে ব্যর্থ ব্যাংক দুটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত বিকেবির রাইট-অফ থেকে ১৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ব্যাংকটি মাত্র ৪.০১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ শতাংশ। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির রাইট-অফ ঋণের স্থিতি ছিল ১৯৩ কোটি টাকা। রাকাবও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকটির গত জুন পর্যন্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ কোটি টাকা। আদায় করতে পেরেছে ৬.১৭ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ শতাংশ।
ব্যাংক দুটি খেলাপি ঋণ কমাতেও ব্যর্থ হয়েছে। খেলাপি ঋণ তো কমাতে পারেইনি, বরং বেড়েছে। তবে রাকাবের নতুন করে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। বিকেবির গত জুনে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ১ হাজার ৯৬৯ কোটি নামিয়ে আনার কথা ছিল। ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি। উল্টো ৫৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের জুন শেষে ছিল ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। রাকাবের খেলাপি ঋণ গত জুনে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি নামতে পারেনি। গত জুন শেষে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের স্থিতি রয়েছে।