আসন ভাগাভাগি নিয়ে সব পক্ষই অস্বস্তিতে
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর। পরদিন হবে প্রতীক বরাদ্দ। অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সুরাহা করতে হবে আওয়ামী লীগের। শরিকদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব আওয়ামী লীগ কীভাবে মেলাবে; আচরণগতভাবে আপাত ‘রহস্যজনক’ জাতীয় পার্টিকেই বা কীভাবে সামাল দেবে- তা নিয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য এসব দলের সঙ্গে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। কোন আসনে কোন শরিক দলের কোন নেতাকে নৌকার হাল ধরতে দেবে আওয়ামী লীগ, আর কোন আসনেইবা লাঙলের সঙ্গে নৌকার সমন্বয় হবে- এসবের দৃশ্যমান কোনো সমঝোতা হয়নি এখনো। এমতাবস্থায় একরকম অস্বস্তিতে আছে সব পক্ষই। উপরন্তু রয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের দ্বন্দ্ব। এমন বাস্তবতায় এগিয়ে আসছে নির্বাচন। বলাবহুল্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, ১৭ ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনী মাঠের চিত্র স্পষ্ট হয়ে যাবে। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অন্তর্কোন্দলের পারদও শীতল হয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত সহিংসতায় না জড়ালে অন্যসব দলের পক্ষ থেকে কেউ কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়াবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
নতুন প্রার্থী দেওয়া এবং দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের যখন যে সিদ্ধান্ত হবে, তখন তা আপনাদের জানানো হবে।
আসন ভাগাভাগি ইস্যুতে অস্বস্তিতে থাকা ১৪-দলের শরিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও সমঝোতা হয়নি। তবে সব পক্ষই সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে আমাদের সময়ের কাছে একাধিকবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার ভাষ্য, আসন বণ্টনের বিষয়টি যত দ্রুত হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য তত ভালো হবে। দলের প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠেই রয়েছেন। আসন বণ্টন হওয়ার পর প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়াও চ্যালেঞ্জিং হবে বলেও মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সপ্তাহে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠক হলেও আওয়ামী লীগ ও জাপা নেতারা জানিয়েছেন- তারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে বারবার কথা বলছেন। এদিকে ‘জাপা যে কোনো সময় ভোল পাল্টাতে পারে’ সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বরাতে গণমাধ্যমে আসা এ সংবাদ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক এবং রাতে জাপা নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বৈঠকের পর কী হচ্ছে জাপায়? আওয়ামী লীগের সঙ্গে
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জাপার সম্পর্কে অবনতি হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নও রাজনীতির বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
নির্বাচনে যাওয়া, না-যাওয়া নিয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ভাষ্য ছিল- রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। গতকাল বুধবার মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। আমরা ক্ষমতায় যাব আর আওয়ামী লীগ বিরোধীদল হবে। এই স্বপ্নে আমরা বিভোর।
রওশনের বিষয়ে চুন্নু বলেন, রওশন এরশাদ দলের কেউ নন। উনি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না। প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলংকারিক পদ। নির্বাহী কোনো ক্ষমতা তার নেই।
অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরও মঙ্গলবার বলেছিলেন, জাপা কোনদিকে যাবে তা বলার সময় এখনো আসেনি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এসব কথার পর রাতে বৈঠক হলেও সমঝোতার বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে আওয়ামী লীগ ও জাপার নেতা থেকে শুরু করে প্রার্থীরাও রয়েছেন অস্বস্তিতে। অনেক দিন ধরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের দৃশ্যপটে নেই। ফলে তার বক্তব্য-বিবৃতিও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে তার হিসাব মেলাতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা ১ ও ৩, ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা), কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া), গাইবান্ধার-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, বরিশাল-৪, ঝালকাঠি-১ আসনে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জটিলতা চরমে রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক আসনেই কমবেশি জটিলতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ আসনে দলীয় প্রার্থীর তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বেশি সমর্থন দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আমেজে আছে। জনগণ দলটিকে বিজয়ী করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা চাইবে। বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র না করলে কোনো কিছুই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না।’
শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো দল। ক্রান্তিকালে দায়িত্বগ্রহণ করে সেই দলকে ফের মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। সুতরাং তিনি জানেন, কখন কোথায় কী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দলের নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল।’
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। এগুলো হলো রাজনৈতিক আলোচনা। এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। কোন কোন রাজনৈতিক দল বা জোট ভাবতে পারে নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা সরকারের সঙ্গে যাবে আর কেউ ভাবতে পারে সরকারের সঙ্গে গেলে তাদের দলগুলোকে সম্মানজনক জায়গায় মূল্যায়ন করা হবে কিনা। এসব ক্ষেত্রে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে আমরা মর্যাদা দিতে চাই। আমরা নেতাকর্মীদের সংখ্যার ভিত্তিতে না, রাজনৈতিক দল হিসেবেই আমরা সকলকে সম্মানিত করতে চাই। এ জন্য আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। আমাদের এ আলাপ-আলোচনা আরও চলবে।’