বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের বর্ণাঢ্য আয়োজন
ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউস, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫২তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মাননা জানানো হয়েছে। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা ৫২ জন রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নেপথ্য শিল্পী সৈনিকসহ মোট ৮৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মাননা জানান।
ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের পরিচালক পাভেল দভয়চেনকভ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজ মোহাম্মদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল হক ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম খান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের পরিচালক পাভেল দভয়চেনকভ অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস আমাদের উভয় দেশের জন্যই একটি গৌরবের দিন। এই দিনটি আমাদেরকে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের বিপ্লবের দিনে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এরপর থেকে রাশিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। রাশিয়া বৃহৎ শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করেছিল।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
পাভেল দভয়চেনকভ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সরকারি সফরের মধ্য দিয়ে এই ঐতিহাসিক সম্পর্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সফরে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য প্রতিনিধিত্ব, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার বিষয়ে আন্তঃসরকারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সোভিয়েত নৌবাহিনী চট্টগ্রাম বন্দর নিষ্ক্রিয় করে এবং বন্দরটিকে সম্পূর্ণরূপে চালু করে। সফরকালে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অনুরোধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পূর্ণ সরকারি বৃত্তি নিয়ে রাশিয়ায় পড়তে যায়। পরে তারা দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে সক্রিয় হন। তাদের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি সোভিয়েত এবং রাশিয়ান গ্র্যাজুয়েট বর্তমানে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ পদে কর্মরত এবং অধিষ্ঠিত।’
পাভেল দভয়চেনকভ বলেন, ‘রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে রাশিয়ান সরকার ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়িয়ে ১২৪ করেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি এই বৃত্তির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে ও আশ্বাস দেন। ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউস রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাশিয়ান ভাষা কোর্সের প্রচারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এই যুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের অবদানের জন্য আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সম্মান করা আমাদের সবার কর্তব্য। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ‘
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের গান, কবিতা পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি বিনিময় করেন।
