নির্বাচনে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে সরকার-ইসিকে দায় নিতে হবে: আসক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই (ইসি) নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এ ছাড়া সভা ও সমাবেশের অধিকার, গায়েবি মামলা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে নির্যাতনসহ বিভিন্ন অধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের কাছে ১৪টি দাবি তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
আগামীকাল রবিবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। এ ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এ ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিনটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সবার জন্য স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে জনগণের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দাবিগুলো তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
যে ১৪ দাবি জানিয়েছে আসক
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যেকোনও ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেমন- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার-বহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃক্তদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি দিতে হবে। এ পর্যন্ত সংঘটিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশের যেকোনো নাগরিককে আটক বা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মিথ্যা মামলা বা গায়েবি মামলা সংক্রান্ত যে অভিযোগগুলো উঠেছে— সেগুলো আমলে নিয়ে অভিযোগের যথাযথ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নাগরিকের সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করার পরিবেশ তৈরি এবং জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ভিন্নমত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ কিংবা কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারত্বের আওতায় রেখে তাদের কর্ম-পরিধি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে যেন কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ বিশ্বাস ও রীতি চর্চার অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করতে হবে। কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার ভোগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা ও সহযোগিতায় বিদেশি দূতাবাসগুলোতে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর চালুসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বিস্তৃত করতে হবে। সর্বোপরি, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আসক-এর নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল দাবিগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি আরও বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগগুলো উঠেছে, তা নিরপেক্ষ ও যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। অন্যথায়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটতেই থাকবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। কাজেই সব ধরনের সতর্কতা ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।