করোনায় নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২৮ লাখ মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৫৪
শেয়ার :
করোনায় নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২৮ লাখ মানুষ

করোনার কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়ে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের হিসাবে দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে এই করোনা মহামারী। একই বছরে বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি অনেক পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয়কে সরাসরি বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বৈশ্বিক মন্দা দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধু বৈশ্বিক মন্দার কারণে বাড়তি ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমেছে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া অপর এক গবেষণায় বলা হয়, পরিবারের নারীরা যেসব কার্যক্রম করে সেগুলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনে ছয়টি অধিবেশনে প্রায় ৯টি পেপার এবং দুটি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে গ্লোবাল প্রাইস শকস অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি শীর্ষক অধিবেশনে চারটি পেপার উপস্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো গভর্নেন্স অব ফুড সিস্টেম, স্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ ফুড সিস্টেম, ইমপ্যাক্ট অব দ্য গ্লোবাল প্রাইজ শক অন দি বাংলাদেশ ফুড সিস্টেম এবং ইমপ্লিমেশন ফর পলিসি অ্যান্ড ফারদার রিসার্স। 

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই)-এর পরিচালক পুনাল ডোরাসের সভাপতিত্বে এ অধিবেশন পরিচালনা করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল। এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। বক্তব্য দেন আইএফপিআরআইয়ের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ডুনিয়েল রেসনিক, পরিচালক জনস ফ্রোরলো, সিনিয়র সাইনটিস্ট এনজা প্যারাডিসাসহ আরও অনেকে। দিনব্যাপী বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

বক্তারা বলেন, এগ্রি ফুড সিস্টেম একটি নতুন ধারণা। এখানে প্রাথমিক কৃষি (কৃষি উৎপাদন), সরবরাহ চেইন, ব্যবসায়ী এবং কৃষি সার্ভিস সেন্টার সব মিলিয়ে একটি অ্যাগ্রি ফুড সিস্টেম। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক কৃষি কমেছে। কিন্তু বেড়েছে ফুড প্রসেসিং, কৃষিপণ্য বাণিজ্য এবং কৃষি সেবা খাত। বাংলাদেশে এখনো প্রাথমিক কৃষি বড় আছে। তবে সেটি ধীরে ধীরে কমছে। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম বেড়েছে। এর মানে বাংলাদেশেও অ্যাগ্রি ফুড সিস্টেম উন্নত হচ্ছে। 

বক্তারা আরও বলেন, করোনা বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ছিল সফল। কোনো ক্ষেত্রে কৃষিতে মানুষের কাজের সুযোগ বেড়েছিল। অর্থাৎ করোনার সময় মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে কৃষিতে কাজ করেছেন। তবে করোনার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল কৃষিপণ্য সরবরাহ, ট্রেডিং এবং অ্যাগ্রি ফুড সিস্টেমের অন্যান্য ক্ষেত্রে।  

তারা বলেন, করোনার সময় ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছিল। এর মধ্যে বড় অংশ হচ্ছে শহরের মানুষ। যারা কাজ হারিয়ে গ্রামে গেছেন, কিন্তু সেখানেও কাজ পাননি। পরে দারিদ্র্য পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার হওয়া শুরু হলেও শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক মন্দার কারণে দরিদ্র হয়েছে ৫০ হাজার মানুষ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-২) ক্ষুধা মুক্তি সফল করতে পরিকল্পনা কমিশন এর আগে বলেছিল, প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু আমরা মনে করি এর চেয়ে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।  

বক্তারা বলেন, অবৈতনিক নন-মার্কেট গৃহস্থালি এবং যত্নশীল কাজের মাধ্যমে সামাজিক প্রজনন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এসব কাজে নিয়োজিত আছেন মূলত নারীদের একটি বড় অংশ। তাদের কাজের অবদান জিডিপির ১৪ দশমিক ৮ শতাংশের সমান। যা ভারতের ১৪ শতাংশ এবং শ্রীলংকার ১৫ শতাংশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। 

তারা বলেন, নারীদের এসব কাজের মূল্য নিয়মের কারণে হয়তো জিডিপিতে যুক্ত করা যাবে না। কিন্তু এর একটি মূল্যায়ন জরুরি। সেক্ষেত্রে এসব গবেষণা ভূমিকা রাখতে পারে। আরও বলা হয়েছে, কোনোরকম অর্থ নেওয়া ছাড়াই নিজের পরিবার এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা, পরিবার এবং পরিবারের জন্য অবৈতনিক গার্হস্থ্য পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য বা ব্যক্তিদের ভ্রমণ, চলাফেরা, পরিবহণ ইত্যাদি কাজ করা হয়ে থাকে। শিশুদের ও বৃদ্ধদের যত্ন সেবাও এর সঙ্গে যুক্ত। আরও আছে খাদ্য এবং খাবার ব্যবস্থাপনা এবং প্রস্তুতি, পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের জন্য অবৈতনিক যত্ন সেবা ইত্যাদি কাজ। গবেষণায় অবৈতনিক পরিচর্যা কাজের পদ্ধতিগত স্বীকৃতি হাইলাইট করার ক্ষেত্রে নীতিগত প্রভাব রয়েছে। 

অপর এক গবেষণায় বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ শতাংশ স্নাতক বেকার থাকছে। এসব কলেজ থেকে ২০২১ সালে এ হার ছিল ৬৬ শতাংশ। জরিপে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশই বেকার অবস্থায় রয়েছে। বেকার অবস্থায় থাকাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি বিএ পাশ করেছিলেন। ২৩ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক অর্জন করেছেন। লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে পাশ করেছেন প্রায় ২১ শতাংশ। বেকারদের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পাশ করেছেন ইসলামের ইতিহাস এবং বাংলায়। তবে তাদের মধ্যে ইংরেজিতে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা কম বেকার রয়েছেন। অর্থনীতি এবং হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাও বেকারত্বের শিকার হয়েছেন কম। তবে সামাজিক বিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় ১ শতাংশ বেকার রয়েছেন। দেশের ৬১টি কলেজের ১৩৪০ জন শিক্ষার্থী এবং ৬১ জন অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়ে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।