সমঝোতার অপেক্ষা বাড়ল

মুহম্মদ আকবর
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শেয়ার :
সমঝোতার অপেক্ষা বাড়ল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। গতকাল সোমবার গণভবনে পৌনে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক চললেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি জোটের নেতারা। এ অবস্থায় সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে।

বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যায় ৬টার দিকে; চলে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত। বৈঠকে অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বিষয়ে ফের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ক্ষমতাসীন জোট ‘চৌদ্দ দল’। দীর্ঘ বৈঠকে জোটের শরিকরা বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুরুতে এবং সবার বক্তব্য শেষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, পুরো সময় চাওয়া-পাওয়া এবং আগামীতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি সভাপতি জাকির হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বৈঠক চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, চৌদ্দ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন অনেকেই ধারণা করেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জানানো হবে। আওয়ামী লীগের কৌতূহলী অনেক নেতা ধানমন্ডিতে জড়োও হন।

কিন্তু পরে জানানো হয়, মঙ্গলবার (আজ) দুপুর ১২টায় ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেবেন। যদিও এর মধ্যে আসন ভাগাভাগির চূড়ান্ত বিষয় আসার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। তাদের ভাষ্য, বৈঠকে ইতোমধ্যে সমঝোতার বিষয়ে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে সমঝোতার জন্য ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে সঙ্গে রাখতে শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানান আমির হোসেন আমু। এ সময় শেখ হাসিনাকে দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায়নি বলে জানান জোটের এক নেতা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জোটের অনিবার্যতা তুলে ধরে সমঝোতার কথা বলেন। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া শেখ হাসিনার কাছে সংসদ সদস্য হওয়ার আকাক্সক্ষার কথা ব্যক্ত করেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাচ্ছি- এই বিষয়টা চূড়ান্ত হয়েছে। আর আসনের বিষয়টি আমির হোসেন আমু ভাই আর ওবায়দুল কাদের বসে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা সবাই মেনেই বৈঠক শেষ করেছি।’

গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসকে শিকদার দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘বাগেরহাটের গুরুত্বপূর্ণ আসনে আমি প্রার্থী ছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এবং উইনিবল প্রার্থী থাকায় আমি দাঁড়াব না বলে নেত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু জোটের থাকার বিষয়টিকে আমি আমার বক্তব্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছি।’

গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার আমাদের সময়কে বলেন, ‘বৈঠকে আমি বলেছি বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশে-বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা অতীতের মতোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। নির্বাচনের পর সরকার গঠনেও যেন মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে জোর দিয়েছি। আমি বলেছি, আমাদের দলের ৮ জন প্রার্থী আছে, তাদের চৌদ্দ দলের প্রার্থী হিসেবে গণ্য করলে খুশি হব।’

বৈঠকে শেখ হাসিনা জানান, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে। নির্বাচনে কেউ যেন কোনো প্রকার ত্রুটি খুঁজে না পায়, সেদিক লক্ষ্য রেখে নির্বাচনে সবাইকে অংশ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ হয়ে যাদের প্রার্থী মাঠে কাজ করছে বা যারা আপিলের মাধ্যমে বৈধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে, তারা সেভাবেই থাকুক। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে আছে এবং থাকবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। তবে কিছু আসনে সমঝোতা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দায়িত্ব দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভায় জোটের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা চ্যালেঞ্জ ও অম্ল মধুর স্মৃতির বিষয়ে তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য দেন। সেই সঙ্গে জোটের সাফল্যও তুলে ধরেন। নির্বাচন সামনে রেখে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, ষড়যন্ত্র আছে, সব মোকাবিলা করে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সবাইকে তাগিদ দেন বলেও জানান বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়–য়া, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নজিবুল বশর মাইজভা-ারীসহ পাঁচ-ছয়টা আসনে সমঝোতা হতে পারে। বাকিগুলো যাদের প্রার্থী যেভাবে আছে, সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তিনি জানান, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন না আসায় জাতীয় পার্টির সঙ্গে পরবর্তী সময়ে বিশেষ সমঝোতার বৈঠক হতে পারে। আসন ভাগাভাগিসহ নানা বিষয় সামনে রেখে সমঝোতা হতে পারে নির্বাচনমুখী বেশকিছু দল ও জোটের সঙ্গেও। সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবার চৌদ্দ দলের শরিকদের অল্পে তুষ্ট থাকতে হবে।