বৃদ্ধকে খুন করে নিয়ে গেল টাকা ও জমির দলিল
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় সৈয়দ আলী আকন্দ (৭৫) নামের এক বৃদ্ধকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে উপজেলার শিকটা গ্রামে খুনের এ ঘটনা ঘটে।
বৃদ্ধের ছেলেদের অভিযোগ, রাতে ডাকাতরা বাবার জমানো টাকা লুট করতে এসে তাকে খুন করে পালিয়ে গেছে। তবে পুলিশ বলছে ডাকাত নয়, অর্থ হাতিয়ে নিতেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে। যা তদন্তের মাধ্যমেই উদঘাটিত হবে।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বৃদ্ধের দুই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
পরিবার প্রতিবেশী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত বৃদ্ধের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বৃদ্ধের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি বড় ছেলে তৈয়ব আলী আকন্দের সংসারে খাওয়া দাওয়া করলেও থাকেন আলাদা বাড়িতে। তিনি ২৫-৩০ বিঘা জমির মালিক। এই বয়সেও সংসারের হাল ছাড়েননি। সংসার নির্বাহ করে তিনি ওই গ্রামের মধ্যে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেই সংসার পরিচালনা করেন।
আরও জানা যায়, কিছুদিন আগে তিনি জমি কেনার জন্য ঘরের মধ্যে একটি স্টিলের বাক্সে ১০-১২ লাখ টাকা রাখেন। তিনি ব্যাংকে কোনোদিন লেনদেন করতেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি খাওয়া-দাওয়া সেরে তার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতের কোনো এক সময়ে কে বা কারা তার ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণ ও জমি দলিল নিয়ে চলে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদুল হক বলেন, ‘ডাকাতরা টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যাবে কিন্তু দলিল নিয়ে যাবে কেন। এর পেছনে অন্য রহস্য থাকতে পারে। পুলিশ ভালভাবে তদন্ত করলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।’
নিহতের বড় ছেলে তৈয়ব আলী আকন্দ বলেন, ‘বাবা কয়েকদিন ধরে একজনের জমি কেনার কথা বলছিলেন। সে কারণে ১০-১২ লাখ টাকা স্টিলের বাক্সের মধ্যে রেখেছিলেন। গত রাতে ডাকাতরা ওই টাকা নিতে এসে আমার বাবাকে ছুরি মেরে খুন করে টাকা, স্বর্ণ ও জমির দলিল নিয়ে গেছে। আমি সকালে বাবার ঘরে ঢুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা খাটের উপরে পড়ে আছে। এরপর আমি সবাইকে বিষয়টি অবগত করি।’
মেঝ ছেলে নাজমুল আকন্দ বলেন, ‘আমি বাবার সংসার থেকে আলাদা। বাড়িও আলাদা। শুক্রবার সকালে মাঠে আলু রোপণের কাজ করার সময় আমার ছেলে গিয়ে খবর দেয় বাবাকে কারা যেন খুন করেছে। এসে দেখি বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। আমি এসবের কিছুই জানিনা। তবে আমার বাবাকে যেই খুন করুক না কেন, আমি বাবা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ‘এটি ডাকাতির ঘটনা নয়, বৃদ্ধকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের গলার নিচে বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ফলে গভীর ক্ষত হয়েছে। ক্ষত দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃদ্ধের দুই ছেলে তৈয়ব আলী ও নাজমুলকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’