প্রভাবশালীদের বাক্সে যেতে পারে আ. লীগের ভোট
রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি দলের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকার সুযোগ নেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। তবে দলটির একটি বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। সরকার গঠন বা বিরোধী দল, যখনই ভোটের মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ, সংগৃহীত ভোটের ৩০ শতাংশের বেশি পেয়েছে। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটি ভোটে না থাকলেও তাদের সমর্থক-ভোটাররা কী করবেন- এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের একটা অংশের ভোটার রয়েছেন, যারা দেশে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করেন বা কারও স্বজন সরকারি চাকরি করেন, তাঁরা তাঁদের আসনে যে দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেন, সেদিকেই ঝুঁকতে পারেন ব্যবসা ও চাকরি রক্ষায়। স্থানীয়ভাবে নিজস্ব সম্পদ রক্ষার ভাবনা থেকেও এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অনেক ভোটার। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভোটারদের নিজস্ব নিরাপত্তা সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয় হবে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে তাঁরা প্রভাবশালী প্রার্থীর দিকেই ঝুঁকবেন। বিশ্লেষকদের আরও ধারণা, আওয়ামী লীগের সব ভোটার বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে যাবে, এটা একেবারেই অসম্ভব। তাই আগামী নির্বাচনে দলটির অনেক ভোটার শেষ পর্যন্ত ভোট বর্জন করতে পারেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভোটারদের কোনো দলের পক্ষে ভোট দিতে বলছি না। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংক থাকলেও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর দলটির সাধারণ সমর্থকদের একটা বড় অংশই দলটির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আর যাঁরা আওয়ামী লীগের গোঁড়া সমর্থক, তাঁরা হয়তো দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনাই পালন করবেন। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল, তাই আওয়ামী লীগের ভোটররা হয়তো সেদিকেই ঝুঁকতে পারেন। আদর্শিক জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ-জামায়াত পুরোপুরি বিপরীতমুখী। তাই তাদের প্রতি আওয়ামী লীগের সহানুভূতি কমই থাকবে। যেহেতু ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, তাই নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ বিবেচ্য না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এবং শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখনও মনে করেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে হলেও ভোটের সুযোগ পাবেন নৌকার প্রার্থীরা। তাই অন্য দলের নয়, নিজ দলের প্রার্থীদের জন্যই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন সমর্থকরা। যদিও সেই সম্ভাবনা খুবই কম। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। যদিও দলটি এ রায়কে পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, খুব সহজেই আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে নতুন ফরমেটে দল গোছাতে পারলে হয়তো রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে পারে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মধ্যম সারির নেতারা এখনও শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে চলেছেন। তাই সহসাই তাঁদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটার সমর্থকদের ভোট কোন বাক্সে যেতে পারেÑ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগের বড় একটি ভোট ব্যাংক সব সময়ই ছিল। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর কিছুটা হয়তো কমেছে। আগামী নির্বাচনে দলটির মোট ভোটার-সমর্থকের হয়তো ১০ শতাংশ ভোট দিতে যাবেন এবং আসনভিত্তিক সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। যাঁদের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে, যাঁদের সম্পদ রয়েছে, কেউ কেউ চাকরি ও কর্ম টেকাতে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করবেন, যেন আগামীতে টিকে থাকতে পারেন।
আওয়ামী লীগ ভোটে না থাকলেও এখনও সম্ভাবনা রয়েছে তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির। যদিও নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাক পায়নি দলটি। তাদেরও ভোটে না রাখার দাবি উঠেছে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়া দলগুলো থেকে। তাই শেষ পর্যন্ত যদি সরকার জাতীয় পার্টিকেও ভোটের সুযোগ না দেয়, তাহলে আগামী নির্বাচনও একপেশে হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। আর যদি আওয়ামী লীগ না থেকে জাতীয় পার্টি ভোটে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটারদের পছন্দের তালিকায় জাতীয় পার্টি থাকতে পারে। আবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী না থাকলেও দলের পদে ছিলেন না কিন্তু আওয়ামী লীগ করেন, এমন কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। যদিও বিভিন্ন দল থেকে বলা হয়েছেÑ আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতা যেন ভোটে দাঁড়াতে না পারেন। এ ক্ষেত্রে যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ভোটে না থাকলেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুযোগ থাকা দরকার। সেটাও যদি বন্ধ হয় তাহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অপরাধ করেননিÑ এমন অনেক লোক রয়েছেন, যাঁরা হয়তো প্রার্থী হতে চাইবেন। সেই সুযোগও বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায় হবে।
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের