দুর্বৃত্তদের হামলায় ৩ রাবি শিক্ষার্থী আহত, মহাসড়ক অবরোধ

রাবি প্রতিনিধি
২০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪
শেয়ার :
দুর্বৃত্তদের হামলায় ৩ রাবি শিক্ষার্থী আহত, মহাসড়ক অবরোধ

দুর্বৃত্তদের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৩ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং আরেক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। 

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের কাজলা গেট সংলগ্ন 'কাজলা ক্যান্টিন' নামের একটি হোটেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

আহতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ফারাবি, একই বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের তামজিদ আহমেদ বখশি ও নাট্যকলা বিভাগের মিনহাজ।

জানা গেছে, ফারাবি মাদার বখস হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী ছিলেন। তবে ছাত্রজনতার কোটা বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন ফারাবি।

দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই ৩ শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জনসম্মুখে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা কোথায়? অবিলম্বে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজলায় খাবার হোটেলে দুর্বৃত্তরা ফারাবিকে মারধর শুরু করলে ঠেকাতে আসেন ফাইনান্স বিভাগের বখশি, রয়ন, মঈনুদ্দিন ও নাট্যকলা বিভাগের মিনহাজ। এ সময় দুর্বৃত্তদের আঘাতে ফারাবি, মিনহাজ ও বখশি আহত হন। মিনহাজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ফারাবিও আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আহত বকশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়ে মেসে গেছেন।

আহত শিক্ষার্থী তামজিদ আহমেদ বখশি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা ১০টার বেশি বাইকে হেলমেট ও মাস্ক পরে এসেছিল। দুর্বৃত্তরা হোটেলের ভেতর থেকে মারতে মারতে আমাদের হোটেলের সামনে নিয়ে আসে। আমাকে মারতে মারতে রিকশায় তুলে সুইটের মোড় দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর তাদের মোবাইলে একটা কল আসার পরে বলে, ‘আসলডারে ধইরা ফালছি ওরে ছাইড়া দে৷’ তখন আমাকে আধা ঘণ্টা হাটানোর পরে বলে, ‘তোরে ছাইড়া দিমু আমাদের পিছে আসতে পারবি না৷’ পরে আমাকে কাজলা মোল্লা স্কুলের পেছনে এনে রেখে বলে, ‘আমরা যাওয়ার পর তুই যাবি৷’ তারা বলছিলে, ‘ও ছাত্রলীগ, ওরে ধর৷’

সিজান নামে ফাইন্যান্সের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কাজলা ক্যান্টিনে খাওয়ার সময় হঠাৎ ৩-৪ টা মোটরসাইকেলে করে মুখ ঢাকা ও হেলমেট পরা কিছু লোক এসে তুই ছাত্রলীগ করতি বলেই কলার ধরে ফারাবিকে ঘুষি দেয়া শুরু করে। ৩/৪ মিনিট পর ২০২৩- ২৪ সেশনের বখশি থামাতে গেলে তাকে নিচে ফেলে পাড়াতে শুরু করে এবং পরে বাইকে করে কোথাও নিয়ে চলে যায়। আমরা ১ ঘণ্টা পরে তার খবর পাই।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ফারাবিকে মারছেই। ফাইন্যান্সের ২০২৪-২৫ সেশনের রয়ন থামাতে গেলে তার বুকে বন্দুক ধরে। ফারাবিকে কিচেন রুমে নিয়ে মারতে শুরু করে। প্রথমে ২/৩ টি গাড়ি ছিল। তাদেরকে থামানোর মাঝে আরও গাড়ি আসে। তারা ভয় দেখানোর জন্য বলে গুলাগুলি করবে। একপর্যায়ে এক ছোটভাইকে কোপ মারে এবং সবাই ভয় পেয়ে যায়। এই সুযোগে তারা ফারাবিকে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে আমাদের বন্ধু-বান্ধবরাও আসে।’

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে দুর্বৃত্তদের কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশসহ আমরা মূল ঘটনা ও জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছি।’

আমাদের সময়/আরআর