আ. লীগের কর্মসূচি মোকাবিলায় কঠোর হুশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৬
শেয়ার :
আ. লীগের কর্মসূচি মোকাবিলায় কঠোর হুশিয়ারি

১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিতে কেউ নামলে কঠোরভাবে মোকাবিলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আট দলের নেতারা। গতকাল রাজধানীর পল্টন মোড়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আন্দোলনরত আট দলের সমাবেশে বক্তারা এই হুশিয়ারি দেন। সমাবেশ শেষে বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। এতে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও সমকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আমাদের দাবি কম, কিন্তু খুব সুস্পষ্ট। জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দেশের জনগণ নির্বাচনের আগে গণভোট চায় বলে দাবি করেন ডা. শফিকুর রহমান। গণভোটের বিষয়ে সব দল একমত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন?

জামায়াতের আমির বলেন, এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হলে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকবে না। তিনি বলেন, জামায়াতসহ আট দল ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা নিয়ে কেউ যাতে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা না করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে, বাকিদের তাই মেনে নিতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ সেটি মেনে নিতে রাজি নন। জুলাই সনদেই যদি কেউ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রতি তারা শ্রদ্ধা কীভাবে দেখাবে?

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের ভাষা বুঝতে হবে। (আগামী নির্বাচনে) কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে। জনতা কী চায়, কান পেতে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যাঁরা এটি বুঝতে ব্যর্থ হবেন, নিজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দলগুলো ভদ্র ভাষায় কথা বলছে। ভদ্র ভাষায়ই কথা বলবে। তবে দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। কারণ এ দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। তাই ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের মানুষ মাথা নত করবে না।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, সমাবেশের পর আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্রুতই পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।

সমাবেশের সভাপতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এখন গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন করবেন কোন আইনে? গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনিভিত্তি পেলেই জাতীয় নির্বাচনও আইনিভিত্তি পাবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভারতে পালাতে পেরেছে। নতুন করে যাঁরা ফ্যাসিবাদী হতে চাইছেন, তাঁরা পালাবেন কোথায়?

সমাবেশে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, একটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। কোনোভাবেই দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে। এই জুলাই সনদকে আমরা কোনো কাগজের সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। জুলাই সনদকে আমরা আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই।

তিনি বলেন, গণভোট বাস্তবায়ন ছাড়া যদি জাতীয় নির্বাচন হয়, সেখানে অনেকগুলো বড় জটিলতা সৃষ্টি হবে। সংসদ নির্বাচন হলেও উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন কীভাবে হবে, সেটা স্পষ্ট নয়।

জুলাই সনদের গণভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানান মামুনুল হক। তিনি বলেন, সরকার আট দলের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে যদি ব্যর্থ হয়, যে ভাষায় বললে সরকার বুঝবে আমরা সেই ভাষা প্রয়োগ করব; সেই কর্মসূচি ঘোষণা করব।

তিনি আরও বলেন, স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত- বাহাত্তরের বাকশালপন্থি আর জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থি। বাহাত্তরের পরাজিত শক্তি ১৩ নভেম্বর লকডাউনের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে। আমরাও ঘোষণা করতে চাই, ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থিকে বাংলার রাজপথে নামতে দেব না। যদি কেউ নামার অপচেষ্টা চালায়, আমরা তাদের রাজপথে মোকাবিলা করব।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম ও সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহ।

আট দলের বৈঠক : সমাবেশ শেষে বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ পরবর্তীতে আট দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। এতে নভেম্বরেই গণভোটের আয়োজনসহ পাঁচ দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের ব্যাপারে দেশে চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারূফ গণমাধ্যমকে জানান, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ও জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের ব্যাপারে আলোচনার জন্য আজ ১২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হবে এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আট দলের শীর্ষ নেতারা কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।

সমাবেশে ও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাদ্দিদ বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাসিত আজাদ ও যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজি, মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, সাধারণ সম্পাদক কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।