ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় লেজার পদ্ধতিগুলো কতটা উপকারী

ডা. জাহেদ পারভেজ
১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৩
শেয়ার :
ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় লেজার পদ্ধতিগুলো কতটা উপকারী

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এসেছে লেজার চিকিৎসা এবং এ চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তবে এখনও অনেকের মনে এ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও ভয় কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা পুরোপুরি ভুল। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে লেজার প্রয়োগ করলে এটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি পদ্ধতি।

লেজার হচ্ছে আলোকে উদ্দীপিত বিকিরণের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা। এটি মূলত শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রিত আলোকরশ্মি, যা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে আলো ব্যবহার করে শরীরের অবাঞ্ছিত টিস্যু বা কোষ ধ্বংস করতে পারে। সার্জারির মতো কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই আলোর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। ফলে এটি অনেক বেশি নিরাপদ ও ব্যথাহীন। বর্তমানে বাংলাদেশে লেজার চিকিৎসা বহুল ব্যবহৃত একটি প্রযুক্তি। অবাঞ্ছিত লোম অপসারণে লেজার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মুখ, হাত, পা বা শরীরের অন্যান্য অংশের অবাঞ্ছিত লোম স্থায়ীভাবে দূর করতে সহায়ক। ত্বকের গর্ত বা ব্রণের দাগ দূরীকরণে লেজারের ব্যবহার এখন বেশ জনপ্রিয়। জন্মগতভাবে রক্তনালির ত্রুটি বা বিকলাঙ্গতা সংশোধনেও বিশেষ ধরনের ভাসকুলার লেজার ব্যবহার করা হয়। সূর্যের তাপে ত্বকে সৃষ্ট কালচে দাগ, মেছতা বা ফ্রিকলের চিকিৎসায়ও এটি কার্যকর। এমনকি শ্বেতী রোগীর ত্বকের রঙের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেও আধুনিক লেজার চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেজার নিয়ে মানুষের মনে যে ভীতি বা ভুল ধারণা রয়েছে, তার পেছনে তথ্যের ঘাটতি অন্যতম কারণ। অনেকে মনে করেন, লেজারের আলো ত্বকের গভীরে গিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাস্তবে লেজার চিকিৎসায় ব্যবহৃত আলো শুধু ত্বকের নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে এবং সেখানে অবস্থিত পানি, হিমোগ্লোবিন ও মেলানিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তাপ উৎপন্ন করে। এই তাপের প্রভাবে অবাঞ্ছিত টিস্যু বা লোমের মূল ধ্বংস হয়, কিন্তু আশপাশের সুস্থ টিস্যু অক্ষত থাকে। তবে যদি যন্ত্রের মান ভালো না হয় বা প্রশিক্ষণহীন হাতে চিকিৎসা করা হয়, তাহলে কিছু সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমনÑ হালকা জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব বা দাগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এসব ঝুঁকি থাকে না এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়। লেজার থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেজার চিকিৎসার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। অবাঞ্ছিত লোম অপসারণের ক্ষেত্রে যদি হরমোনজনিত সমস্যা বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম না থাকে, তাহলে অল্প খরচে আশানুরূপ ফলাফল পেতে পারেন। অবশ্য তা নির্ভর করে ত্বকের ধরন ও সমস্যার মাত্রার ওপর। নিয়মিত ফলোআপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে লেজারের ফলাফল স্থায়ী হয় এবং পুনরায় একই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

সবশেষে বলা যায়, ত্বকের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য রক্ষায় লেজার চিকিৎসা আধুনিক যুগের এক যুগান্তকারী সংযোজন। এটি শুধু ত্বকের সমস্যা দূর করে না, মানুষের আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ভ্রান্ত ধারণা ও ভয় দূরে রেখে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার

সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ মোড়, ঢাকা

হটলাইন : ০১৭১৫০৫০৯৪৯, ০১৭০৭০১১২০০