জামায়াত ও বাবার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন
বরিশালের গৌরনদীতে বাবা ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় নিজ সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন দলটির বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম খান।
নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে রোববার (৯ নভেম্বর) এমন ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল-১ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ওই জামায়াত নেতা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ নভেম্বর (শুক্রবার) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আরাফাত বিল্লাহ খানের দেওয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।
জামায়াত নেতার ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খানের দাবি তিনি ২৫ বছর ধরে ছাত্রদল, যুবদলের নানা পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেকসহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক তিনি।
জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা, পৌর বিএনপি ও দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে ওই দিন বিকেল ৩টায় সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় অর্ধলক্ষ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ওই জনসভাটি জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। স্কুলমাঠে ছিল জনতার পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ।
জনসভার সভাপতিত্ব করেন বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (আন্তর্জাতিক) ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা মো. হুমায়ুন কবির। ওই জনসভায় এ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম খানের ছেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আরাফাত বিল্লাহ খান বক্তব্য দেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, ‘আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারাকি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন?’ জনসভায় উপস্থিত প্রায় অর্ধলক্ষ জনতা এ সময় সমস্বরে ‘না’ বলে জবাব দেয়।
এরপর আরাফাত বিল্লাহ খান আবার বলেন, ‘কেন ভ্রমণ করবেন না ? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই।’
ওই বক্তব্য শোনার পর যুবদল নেতা আরাফাত বিল্লাহ খানের বাবা মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম খান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে শনিবার ও রোববার মিলে ২দিনে মোট ২টি স্ট্যাটাস দেন।
প্রথম স্ট্যাটাসটিতে তিনি লেখেন, ‘আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাতে কেউ হতাশ হবেন না। আমি আজ চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দুই উপজেলার আমির, আসন পরিচালক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।’
রোববার দেওয়া দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমার ছেলের দেওয়া বক্তব্যের ফলে আমার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছেলেটার বক্তৃতায় আমার দল খুব নাখোশ হয়েছে। আমি বিব্রতশর অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। আমার পরিচয় দেয়ার পরেই সে এমন কথাটা বলেছে। এমন কথাটা সে হয়তো না বললেও পারত।’
ছেলে জাতীয়তাবাদী যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ কথা স্বীকার করে মাওলানা কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাকে নাজানিয়ে সে গোপনে ছাত্রদল করত। এখন যুবদল করছে। আমি যখন তার ছাত্রদল করার খবর জানতে পারি তখন সে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদধারী নেতা। ছেলেকে আমি বহুবার বারণ করেছি। বহু বুঝিয়েছি, কিন্তু তাকে ওই দল করা থেকে ফেরাতে পারিনি। আমি জামায়াতের রাজনীতি করি এ খবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জানেন। এজন্য আমার ছেলেও তার দলের ভেতরে চাপে রয়েছে। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলে শিবির করবে। আমার মতো জামায়াতের নেতা হবেন। কিন্তু তা না করে আমার বিরোধী পক্ষের রাজনীতিতে জড়িয়ে আমাকে রাজনৈতিক ও মানসিক চাপের ভেতরে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দল দেশব্যাপী জরিপ করে জনসমর্থনের ভিত্তিতে এ,বি,সি ক্যাটাগরিতে আসনগুলোকে বিভাজন করেছিল। আমাদের বরিশাল-১ আসনটিকে ধরা হয়ে ছিলসি ক্যাটাগরির আসন হিসেবে। ৫ আগস্টের পরে আমি জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। একই দ্বারে দুই তিনবারও গিয়েছি। নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ আমি গুছিয়ে এনেছি। ফলে সি ক্যাটাগরি থেকে এ আসনটিকে এখন এ ক্যাটাগরিতে ধরা হচ্ছে। বক্তব্যে বিমান চালোনার উদাহরণটি দিয়ে ছেলে আমার নির্বাচন ও রাজনীতিকে শেষ করে দিয়েছে। বাবা ও ছেলে ভিন্ন ভিন্ন দলের রাজনীতির নেতা এ নিয়ে আমি পারিবারিকভাবেও বিপাকে আছি।’
ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, ‘আমি আমার দলের প্রতি কমিটেড। বাবা জামায়াত করেন সেটা তার পছন্দের বিষয়, আমি শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল করেছি, এখন যুবদল করি। এটা আমার ভালোলাগা ও বিশ্বাসের বিষয়। আমি আমার বাবার অদক্ষতা নিয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি জামাতকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছি। জামাত কখনো সরকার পরিচালনা করেনি তাই তাদের দক্ষতা নেই। আবার এ আসনে জামাত কখনো এমপি হয়নি ফলে এমপি হিসেবে এ আসনে জামাতের কোনো নেতার দক্ষতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমার দলের প্রার্থী এম. জহির উদ্দিন স্বপন ইতোমধ্যে দুই দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবে তার সংসদ পরিচালনার দক্ষতা আছে। এগুলোকে ইঙ্গিত করেই আমি ওই কথাগুলো বলেছি। বাবাকে ছোট করা বা জামাতকে হেয় করার জন্য ওই কথাগুলো আমি বলিনি। অথচ জামাতকর্মীরা ইতোমধ্যেই ফেসবুকে আমাকে নানা ভাষায় গালিগালাজ করেছে। যেটা মোটেই কাম্য নয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে জামাত আমার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে। তা না করলে বুঝবো তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়।’
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
আমাদের সময়/আরডি